জলবায়ু সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনকে ডিকার্বনাইজেশন দিবস ঘোষণা
১১ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫৪
ঢাকা: পাঁচটি প্রধান সেক্টরকে কার্বনমুক্ত করার বৈশ্বিক উদ্যোগ নিতে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭ এর ষষ্ঠ দিনকে ডিকার্বনাইজেশন বা কার্বনমুক্তকরণ দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মিশরে চলমান জলবায়ু সম্মেলন থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে মূলত বিভিন্ন সেক্টর থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো পাওয়ার সেক্টর, সড়ক পরিবহন, স্টিল শিল্প, হাইড্রোজেন জ্বালানি এবং কৃষি। এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে আগামী এক বছরের মধ্যে অর্থাৎ কপ-২৮ এর আগে ডিকার্বনাইজেশন বা কার্বনমুক্তকরণ প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। আর এ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে ২৫টি সমন্বিত উদ্যাগের মাধ্যমে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সস্তায় ও সহজলভ্যভাবে ক্লিন এনার্জি মানুষের দৌরগোড়ায় পৌছে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।
তেল, গ্যাস, স্টিল এবং সিমেন্ট শিল্পে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ হয় যা বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ২৫ শতাংশ। এদের মধ্যে স্টিল শিল্পে কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু অপরিহার্য এই শিল্প বন্ধ করা যাবে না। তাই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে এ শিল্পে কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায় তা নিয়ে বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া দেওয়া হচ্ছে।
তেল ও গ্যাস শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশের বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হচ্ছে। এছাড়াও তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সময় মিথেন গ্যাস লিকেজ হয়ে থাকে। এই মিথেন একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। তাই নবায়নযোগ্য বিকল্প জ্বালানির দিকেই আমাদের নজর দিতে হবে বলে মনে করেছেন বিশ্বনেতারা। ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মিথেন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এরইমধ্যে বিশ্বের ১২২টি দেশ বিশ্ব মিথেন চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে।
কপ ২৭ এর আজকের আলোচনায় টেকনোলজি ট্রান্সফার, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং ফাইনান্সিং এর মাধ্যমে কীভাবে তেল এবং গ্যাস ইন্ডাস্ট্রি থেকে মানবসৃষ্ট মিথেন নিঃসরণ কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সবাই একমত হয়েছে যে, আমাদের এখন কম কার্বন নির্গমন করে অথবা প্রায় শূন্য কার্বন নির্গমন করে এমন স্টিল কারখানা এবং হাইড্রোজেনচালিত শক্তি ও টেকসই ব্যাটারিশিল্পের প্রয়োজন। এ জন্য বিশ্বস্ততা এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিলিয়ন পাউন্ডের ইনভেস্টমেন্ট দরকার।
কমপক্ষে ৫০টি বড় আকারের প্রায় শূন্য কার্বন নির্গমন করে এমন শিল্প কারখানা এবং কমপক্ষে ১০০টি হাইড্রোজেন শক্তিধারা পরিচালিত অঞ্চল গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০৪০ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহন হতে দূষণ রোধ করার জন্য ২০৪০ সালের মধ্যে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
কৃষি উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান রাসায়নিক সার ও বর্জ্য হতে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রাস অক্সাইড উৎপাদন হয়। US EPA এর তথ্যমতে— ২০২০ সালে আমেরিকাতে মানবসৃষ্ট গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মোট পরিমাণের ৭ শতাংশর জন্য দায়ী ছিল নাইট্রাস অক্সাইড। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের অবক্ষয় রোধ করতে কৃষিখাতে প্রচুর পরিমাণে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় জোর দিতে হবে।
বিশ্বের সাত শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নিসঃরন হয়ে থাকে সিমেন্ট শিল্প থেকে। এ শিল্পের কাঁচামাল থেকে খাদ ও উদ্বায়ী পদার্থ দূর করতে উচ্চতাপ প্রয়োগে প্রচুর কার্বন নিসঃরণ হয়ে থাকে। কিন্তু অপরিহার্য এই শিল্প বন্ধ করা যাবে না। তাই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে এ শিল্পে কীভাবে কার্বন নিঃসরণ তা নিয়ে বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া দেওয়া হচ্ছে। শিল্পে কার্বনমুক্তকরণের জন্য কপ২৬ এ ফাস্ট মুভার্স কোয়ালিশন গঠন করা হয়েছিল। তারা এখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তাদের অর্ন্তভুক্ত নতুন ১০টি করপোরেট কোম্পানি ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০% প্রায় শূন্য কার্বন নিঃসরণ করে এমন সিমেন্ট ও কংক্রিট কিনবে।
ডিকার্বনাইজেশন বা কার্বনমুক্তকরণকে গতিশীল করতে পরিবেশবান্ধব শিল্পপণ্য তৈরি করতে সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে শিল্পের মান উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিলিয়ন পাউন্ডের ইনভেস্টমেন্ট দরকার। এ ব্যাপারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের বিকল্প কিছু নেই। কপ২৭ আজকের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য জি-সেভেন এ গঠিত ইউরোপিয়ান কমিশন, ভারত, মিশর, মরক্কোসহ অন্যান্য দেশ, নেতৃত্ব স্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকারি মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিল্পখাতে অর্থায়ন এবং নতুন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার।
সারাবাংলা/আরএফ/একে