এসএমই খাতে ২০০০ কোটি টাকার তহবিলে ঋণ বিতরণ ১৯২ কোটি
১২ নভেম্বর ২০২২ ১৮:২১
ঢাকা: ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের মাধ্যমে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও সেখান থেকে এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা। যা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের।
শনিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, ‘কোভিড মহামারি পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপিত নানাবিধ অবরোধের কারণে গোটা পৃথিবীর সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে।’
তিনি বলেন, ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও আজ পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।’ তবে ঋণ প্রাপ্তির এ হার বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোকে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এ খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও প্রতিষ্ঠানিকীকরণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সেবা এবং উৎপাদনশীল খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের মাধ্যমে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধিতে ব্যাংকসমূহের এজেন্ট ব্যাংকিং-এর চেয়ে উপ-শাখা কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পরিমাণ হ্রাস পাবে।’
এছাড়াও ঋণ প্রাপ্তির প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস’ এবং ‘ব্লক চেইন’ কার্যক্রমের ওপর বেশি হারে মনোনিবেশের জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “দেশের সিএমএসমএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ স্থাপনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করেছে।”
কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বড় শিল্পখাতকে সহযোগিতা প্রদান এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও আর্থিক এবং নীতি সহয়তার অভাবে এখাতের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আর্থিক খতিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক নথিপত্রের ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের সিএমএস খাতের উদ্যোক্তাবৃন্ধ প্রায়শই ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। এমন অবস্থায তাদের প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা একান্ত জরুরি।’
কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) মো. জাকের হোসেইন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার পৃথকভাবে দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. জাকের হোসেইন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ এবং ২০২৪ ও ২০২৭ সালে এটি যথাক্রমে ৩২ শতাংশ ও ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই এ খাতের উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, ‘বিবিএস ইকোনোমিক সার্ভে ২০১৩’ অনুযায়ী দেশে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭.৮ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংই ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা হতে বঞ্চিত। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে