দেশে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা
১৩ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫৪
ঢাকা: ফের বাড়ল খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সর্বশেষ তিন মাসে দেশে খেলাপি বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর আগে গত জুন শেষে দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর গত বছর একই সময়ে খেলাপির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সর্বশেষ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যেন দিতে না হয় সে জন্য গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রকৃত ঋণ পরিশোধকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর যারা ঋণ পরিশোধ করেনি তারা লাভবান হয়েছে। এসব কারণে অনেক ব্যবসায়ীরা আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও পরে ঋণ পরিশোধ করেননি। ফলে তারাও খেলাপি হয়েছেন। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর ঋণ গ্রহিতারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কিছু বলেনি। ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে সঠিক হিসাব করা হলে দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকের দুই হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো যত টাকার ঋণ বিতরণ করছে তার মধ্যে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। মোট হিসাবে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও বিতরণকৃত ঋণের তুলনায় তা অনেক বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৩ শতাংশ।
এদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ খেলাপি। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো মোট ৩৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা বিতরণ করলেও এর মধ্যে খারাপ হয়ে পড়েছে ৪ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/একে