‘সিন্ডিকেটের দখলে বীজ উৎপাদন কেন্দ্র’, সরবরাহ বন্ধ ৫১ জেলায়
১৬ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৫৪
ঠাকুরগাঁও: দেশের ৫১ জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিক্রয় কেন্দ্রে গম, বোরো ও আমন ধানের বীজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিখিত কার্যাদেশ পেলেও বন্ধ রয়েছে কার্যক্রম। বিএডিসি‘র বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ঠাকুরগাঁওয়ের উৎপাদন কেন্দ্রের বীজগুলো সংরক্ষতি রয়েছে। সিন্ডিকেট চক্রের ইশারায় কর্তৃপক্ষ বীজ সরবরাহ স্থগিত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বাজারে বীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও বিএডিসি’র উপপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম (বীজ) বীজ পরিবহনের জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে। এতে ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। শর্ত পূরণ না হওয়ায় গত ১১ অক্টোবর দ্বিতীয় দরপত্রের আহ্বান করলে তাতে ৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু প্রথম এবং দ্বিতীয় দরপত্রে কাঙ্ক্ষিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় তা বাতিল করে গত ৯ নভেম্বর পুনরায় দরপত্র আহবান করা হয়। এতে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তৃতীয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সর্বনিম্ন দরদাতা আরআরবি ট্রাডার্সকে গত ১০ নভেম্বর বীজ সরবরাহের জন্য লিখিত কার্যাদেশ প্রদান করে। সে মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি পরিবহনসহ লোকবল নিয়োগ করে কিছু বীজও সরবরাহ করে। কিন্তু গত ১৪ নভেম্বর কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে বীজ সরবরাহ স্থগিত রাখার মৌখিক নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানায়, একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাওয়ার পর এবং দরপত্রের শর্তাবলী মেনে কিছু বীজ সরবরাহের পরে বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এর সঙ্গে একটি সন্ডিকিটে চক্র জড়িত রয়েছে, যা তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে। এই সন্ডিকেটে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারকে লাখ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে বিএডিসি সময়মতো বীজ সরবরাহ করতে না পারলে ৫১ জেলার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
জেলার সদর উপজেলার কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘এই সিন্ডিকেট চক্রের কারণে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হব। ওই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছে।’ একই কথা বলেন বরুনাগাঁও এলাকা হেলাল উদ্দীনসহ অনেকে।
আরআরবি ট্রেডার্সের মালিক মালিক নাজমুল হাসান রাসেল বলেন, ‘দরপত্র কমিটির মূল্যায়ন শেষে আমাকে গত ১০ নভেম্বর বীজ সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করেন। সেই মোতাবেক পরিবহন ও লোকবল নিয়োগ করি এবং কিছু বীজও সরবরাহ করি। কিন্তু হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ আমাকে মৌখিকভাবে বীজ সরবরাহ করতে নিষেধ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কার্যাদেশ পাওয়ার পর একটি সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে এই সমস্ত অপকর্ম চালাচ্ছে। এতে করে আমার পরিবহন ও লোকবল বসে আছে। যাতে করে চরম ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছি। এখন প্রয়োজন হলে আইনের আশ্রয় নেব।’
ঠাকুরগাঁওয়ের বিএডিসি’র বিপনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘জেলায় বরাদ্দ আছে ৫৯৭ মেট্রিক টন। কিন্তু পাওয়া গেছে ২৭৭ মেট্রিক টন। কৃষকরা সময়মত বীজ পেলে ফলন ভালো হবে। তবে দেরিতে পেলে ফলন কম হবে।’
এ বিষয়ে জেলার বিএডিসি’র বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন কেন্দ্রের (বীজ) উপপরচিালক তাজুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, ‘দরপত্র পাওয়ার নিয়ম মেনে আরআরবি ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কেন তা বন্ধ করেছেন, সেটা তারাই ভাল জানেন।’
সারাবাংলা/এনএস
ঠাকুরগাঁও বাংলাদশে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বীজ উৎপাদন কেন্দ্র