বন্ধ হচ্ছে না চাকরির নামে লাইফওয়ের প্রতারণা
২৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:০৬ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:২৮
।। শামীম রিজভী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভালো চাকরির খবর পেয়ে বগুড়া থেকে ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় লাইফওয়ে প্রতিষ্ঠানে এসে ৪৮ হাজার টাকা জমা দিই। আমার মতো এমন আরও অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছে তারা।
এরপর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়- ‘চাকরি’ চলবে তিন মাস, থাকা খাওয়া বাবদ মাসে ১০ হাজার ৫ শ টাকা কাটা হবে। আর বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু তিন মাস শেষ হয়ে গেলেও টাকা ফেরত দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। পরে জানা যায়, ওই টাকার বিনিময়ে তারা ইলেকট্রনিক্স ও সিরামিক পণ্য দেবে; সেগুলো বিক্রি করে টাকা তুলতে হবে, জানান মো. তাজবীর ইসলাম।
এ ছাড়া মো. স্বাধীন প্রধান নামে আরেকজন ভুক্তভোগী সারাবাংলাকে জানান, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে। এরসঙ্গে পণ্য বিক্রির ওপর কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে বেকার তরুণদের আকৃষ্ট করা হয়। তারপর প্রশিক্ষণের কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, যোগদানের পরপরই প্রশিক্ষণের নামে তাদের চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের কৌশল শেখানো হয়। যত লোক জোগাড় করা যাবে, বেতন ও কমিশন তত বাড়তে থাকবে বলে প্রলুব্ধ করা হয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশীরা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুসহ পরিচিতদের ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে উৎসাহিত করেন। অনেকেই এভাবে জামানত দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটির লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একের পর এক অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছে না বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা।
ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে শনিবার (২৮ এপ্রিল) বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে র্যাব-১১। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- দলনেতা রাশেদুল রহমান সুমন, সহযোগী জিয়াউর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, আরিফুল ইসলাম, নাঈম, বিটু মিয়া, গোলাম কিবরিয়া, মাহবুবুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, সজীব হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মঈনুল ইসলাম, শাহীন ইসলাম, আবুল কালাম, সাকিব খান, হুরমুজ আলী, সাইফুল ইসলাম, ইমন আহমেদ, নয়ন রায়, রুহুল আমীন, আমজাদ, সুমন ও রবিন।
এ সময় কয়েকজন নারীসহ ৩১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয় এবং তাদের দেওয়া ৪ লাখের বেশি টাকা ও বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
বার বার টাকা দিয়েও অসংখ্য বেকার-যুবক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির কাছ থেকে।
অনুমোদন না থাকার পরও ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অফিস খুলে বেকার যুবক ও নিন্মবিত্ত মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
এর আগেও, ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২০ হাজার বেকার যুবক ও তরুণকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও পণ্য বিক্রির মাধ্যমে টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগে লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের আশুলিয়া শাখার চার কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সে সময় ওই প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক হাসান আলী এবং কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, মামুন ও অসীম দাসকে গ্রেফতার করা হয়।
গাজীপুরের ভোগড়া চান্দনা-চৌরাস্তার শহীদ হুরমত আলী ভবনে ১ম, ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ তলায় অনুমোদন ছাড়াই লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রা. লি. নামের একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সেখানেও একইভাবে বেকার-যুবকদের প্রতারণা করা হয়েছে।
‘সরকার নতুন একটি কর্মসূচি চালু করেছে, পাঁচ হাজার পঞ্চাশ টাকা জমা দিলেই প্রতি মাসে ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। আরও পাওয়া যাবে মূল্যবান সামগ্রী। গ্রাহক যত বাড়াবেন, ভাতা তত বেশি পাবেন। আপনাদের পরিবার চালানোর দায়িত্ব আমাদের’- এমন প্রলোভন দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১হাজার দুই শ ৬২ জন দুঃস্থ নারীর কাছ থেকে ৬০ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া গত ২০১১ সালের ১৭ জুলাই সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের উচালিয়াপাড়া মোড়ে মা শপিং কমপ্লেক্সে প্রতারণা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে কথিত শাখা ব্যাবস্থাপক মো. সাইদুল ইসলাম, সিনিয়র টিম লিডার মো. নান্নু মিয়া, টিম লিডার মো. রফিক মিয়া ও মো. লিটন মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
র্যাব-১১-এর এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার (সিও) মেজর আশিক বিল্লাহ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির নামে প্রতারকরা দীর্ঘ ৮ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে। একজন ভুক্তোভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে ২১ প্রতারককে আটক করতে পেরেছি। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে র্যাব তাদের সব ধরণের আইনানুগ সহযোগিতা করবে।
সারাবাংলা/এসআর/এমআই