গ্রাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত ঢাবি ক্যাম্পাস
১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৩৫
ঢাবি: মাথায় কালো টুপি। গায়ে গাউন। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম ছবি তুলছেন বন্ধুদের সঙ্গে। বিভিন্ন ভঙ্গিতে, বিভিন্ন জায়গায়। কাইয়ুম বলেন, ‘সমাবর্তন এমন একটি বিষয়, যেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি। গ্রাজুয়েট হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়া আনন্দের ব্যাপার। এমন উৎসবমুখর পরিবেশ সে আনন্দের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে’
আব্দুল কাইয়ুমের মতো হাজার হাজার গ্রাজুয়েটের পদচারণায় মুখরিত হয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ৫৩তম সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এখন প্রাণের মেলা। ক্যাপ-গাউন পরা গ্রাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত সারা ক্যাম্পাস।
কার্জন হল, অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য কিংবা টিএসসি— সব জায়গাতেই গ্রাজুয়েটদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন ভঙ্গিতে তারা ছবি তুলছেন। বিভাগের বন্ধুরা একত্র হয়ে কিংবা হলের বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তুলছেন— এমন দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদিন যাবৎ।
সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বড় হচ্ছি। ব্যস্ত হচ্ছি। সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যায় না আর। আজকের এই দিনটাতে সবাইকে সবাই দেখছি। তাও এমন উৎসবমুখর পরিবেশে। খুবই আনন্দ লাগছে আজ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে ঘিরে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আছে। প্রথমটি হলো— ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চের সমাবর্তন। সেবার কার্জন হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে সমাবর্তন স্থলেই প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা।
অন্যটি হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। আচার্য হিসেবে উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোররাতে ঘাতকের হাতে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। স্থগিত হয় সেবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠান।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ৫২তম সমাবর্তন। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত তিন বছর অনুষ্ঠিত হয়নি সমাবর্তন।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২ থেকে শুরু হয়েছে ৫৩তম সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। অংশ নিচ্ছেন ৩০ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ২২ হাজার ২৮৭ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত আছেন। এছাড়া অধিভুক্ত সাতকলেজের গ্রাজুয়েটরা অনলাইনে যুক্ত হয়েছেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে।
এদিকে, গ্রাজুয়েশন শেষ করার স্বীকৃতির আনন্দ ভাগাভাগি করতে ক্যাম্পাসে পরিবার নিয়ে এসেছেন অনেকেই। বাবা-মায়ের মাথায় সমাবর্তন টুপি পরিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে গ্রাজুয়েটদের।
বাবা-মায়ের সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাকিব আল হাসান লেখেন, ‘আমার এক জীবনে যাবতীয় অর্জন-সম্মান-ভালোবাসা যা পেয়েছি সব তাদের জন্য। আব্বা-আম্মার সাথে আমার সমাবর্তন উদযাপন। সবাই দোয়া করবেন আমার মা-বাবার জন্য।’
বাবার মাথায় টুপি দিয়ে তোলা একটি ছবি আপলোড করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কায়েনাত লিখেছেন, ‘My Graduate’।
ব্যাকগ্রাউন্ডে নিজের হল বিজয় একাত্তরকে রেখে উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ মা-ভাই ও বোনের সঙ্গে তোলা একটি ছবি আপলোড করেছেন ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন, ‘এই ছবিটা আমার সারা জনমের পূর্ণতা। বাবা দেশে থাকলে ষোলআনা পূর্ণ হতো। এই দিনের জন্য ওনার কত স্বপ্ন, কত বিসর্জন’।
সারাবাংলা/আরআইআর/এমও