বহিরাগতদের দখলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২৬ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৪
ঢাকা: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশে’র ব্যানারে তাবলিগ জামাতের মাওলানা জোবায়ের হাসানের অনুসারীদের মহাসম্মেলন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ঢল নেমেছে।
ইসলামি সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার (৫ই আগস্ট) ভোর থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে দলে দলে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। বিভিন্ন বাস, গাড়ি ও ভারী পরিবহণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন তাবলিগের অনুসারীরা। এ কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও অসুবিধা হচ্ছে।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাস জুড়ে অবস্থান করছে বাস ও ভারী যানবাহন। ফলে ক্যাম্পাসে ঢাবির নিজস্ব বাসগুলো পর্যন্ত ঢুকতে পারছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া সম্মেলন ঘিরে আগত তাবলিগের অনুসারীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন৷
বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, মল চত্বর, শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত, কার্জন হল এলাকা ও ঢাকা মেডিকেলসহ পলাশী মোড় পর্যন্ত সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বাস ও যানবাহনে ভরা। ফলে ক্যাম্পাস জুড়ে দীর্ঘ যানজট লেগে রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারছে না বলে জানিয়েছেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তত ১৬টি বিভাগের ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি সকালে শিক্ষার্থী বাসগুলো তাদের রুট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
ঢাবি শিক্ষার্থী রিয়াজ উল্লাহ বলেন, ‘আগের সময়েরই পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আমলে যে পরিবেশ দেখে এসেছে, সেটাই এখন আবার দেখছি।’
আরেক শিক্ষার্থী ফারদিন বলেন, ‘সকালে আজকে বাস না আসায় আমাকে মেট্রোরেলে আসতে হয়েছে। এমনকি এসে দেখি পুরো ক্যাম্পাস তাবলিগের অনুসারীদের উপস্থিতিতে ভরপুর। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
মাহমুদুর রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সমাবেশ করা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু সমাবেশের নাম দিয়ে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা, বাস রাখা ও চলাচলে সমস্যা তৈরি করা কখনো কাম্য হতে পারে না। প্রশাসনের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মনি আক্তার বলেন, ‘আজকের এই সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দুই হলের মেয়েরা। কাল রাত থেকে উচ্চ শব্দ, এখনো অব্যাহত রয়েছে। আপনারা সম্মেলন করবেন করেন ভালো কথা, শামসুন্নাহার হলের সামনের অংশ কি আপনাদের গাড়ি পার্কিং করার জায়গা? মিশুক মনির চত্বর দখল করে সব পুরুষরা বসে আছে। কলাভবন থেকে যে হলে ফিরব, সেই জায়গাটুকু রাখেনি।’
ক্ষোভ জানিয়ে মনি আরও বলেন, ‘আগেও এমন হয়েছে। ছাত্রলীগ এমন প্রোগ্রাম করলে মেয়েরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ত। এখনো আমরাই ভোগান্তিতে পড়ছি। প্রক্টর স্যার আর ভিসি স্যারের যখন কাজ করা দরকার, তখন তাদের নিরবতা আমাদের আশাহত করে। মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়?’
হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাবলিগের অনুসারীরা বিভিন্ন হলের ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন। এতে করে তারা এক ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। ওয়াশরুমগুলো বাড়তি মানুষের ভারে বেহাল দশায় পৌঁছে গেছে।
শিক্ষার্থী ফাহাদ মাহমুদ বলেন, ‘তাদের সম্মেলন নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাবেশ কর্তৃপক্ষ চাইলে এটা শুক্রবার কিংবা ছুটির দিনে দিতে পারতেন। তারা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা না করেই যে কাজটি করেছেন, সেটা অপ্রত্যাশিত।’
জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) ক্যাম্পাসে পার্কিংয়ের কোনো অনুমতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেয়নি। পুলিশকে জানানো হয়েছিল, সম্মেলনে ১৫-২০ হাজারের বেশি মানুষ হবে না। পুলিশই মহাসমাবেশ ও পার্কিংয়ের অনুমতি দিয়েছে।’
সারাবাংলা/এআইএন/এসডব্লিউ