‘জনগণের উত্তাল তরঙ্গ আপনাদেরকে সুনামির মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে’
২১ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৬
ঢাকা: ক্ষমতাসনী দলের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনো সময় আছে সরে দাঁড়ান, নিরাপদে সরে দাঁড়ান। তা না হলে জনগণের মধ্যে যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে, সেই তরঙ্গ আপনাদেরকে সুনামির মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের যৌথভাবে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটি খবরের কাগজে বড় বড় ব্যবসায়ীর সমস্যার কথা উঠেছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী একটা কথা বলছেন, আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে আছি। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, শ্রমিকদের যে মজুরি দেব, সেই মজুরির টাকা আমাদের কাছে থাকছে না।’
‘সব তো বলার চেষ্টা করে যে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে এটা হচ্ছে। হয়তো বা কিছুটা আছে। কিন্তু শুরুটা করেছ অনেক আগে থেকে। দেশের সমস্ত সম্পদ লুট করছ, ১০ বছরের ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছ। গত এক বছরেই ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছ। যে দেশে সরকারের লোকেরা পুরো সম্পদ লুট করে পাচার করে দেয়, সেই দেশের অর্থনীতি কি থাকতে পারে?’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশে যখন সংকট আসে, সেই সংকট মোকাবিলা করার জন্য যে রিজার্ভ থাকে সেটা দিয়ে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। ব্যবসায়ীরা বলছেন- এই সময় যদি আমরা প্রণোদনা পেতাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুবিধা পেতাম, তাহলে হয়তো দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকা লিখছে যে, ব্যাংকগুলোয় এলসি খোলা যায় না। কারণ, ডলার নেই, ডলার দিতে পারছে না। রিজার্ভের টাকা তো লোপাট করে ফেলেছে আগেই এবং এতো বেশি লোপাট করেছে যে, নিজেই ডিফেন্সিভ হয়ে বলছে, না আমরা রিজার্ভ চিবিয়ে খাইনি। আপনারা চিপিয়ে খাননি আমরা জানি, আপনারা গিলে ফেলেছেন এবং সেগুলো আবার পাচার করে দিয়েছেন, এখানে নাই তো। প্রমাণিত সত্য ।’
‘এতো কথা বলার আমার দরকার নাই। আপনি সাধারণ মানুষের কাছে যান, রিকশা শ্রমিকের কাছে যান, হকারের কাছে যান- সেই বলবে যে, এই সরকার চোর’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষ কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা সমাবেশ আমার এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে যে অনুপ্রাণিত করেছে যে, এখন আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ, সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতনকে একটা মিথ্যা কেইসে গ্রেফতার করেছে। আজকে সকাল তার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বললো, আরেক ফলস কেইসে ঢুকিয়ে রতনকে তিন দিনের রিমান্ড নিয়েছে। এদের কি বিবেক কাজ করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিচারকদের প্রতি সন্মান রেখে বলতে চাই- দয়া করে ন্যায় বিচার করুন। কারণ, এদেশে বহু প্রমাণ আছে-বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা। সুতরাং কেউ পার পাবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বার বার করে আমরা বলেছি, আবারও বলছি- ১৯৭১ সালে দেশের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে এখন গণতন্ত্রের জন্য ৩৫ লাখ মানুষকে আসামী করেছ, আমার ৭ জন যোদ্ধা প্রাণ দিয়েছে। এর মূল্য অবশ্যই তোমাদেরকে দিতে হবে।’
উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান থোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্র দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ