‘২ জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তি শনাক্ত’
২১ নভেম্বর ২০২২ ২৩:২৮
ঢাকা: ঢাকার আদালত পাড়া থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘রোববার (২০ নভেম্বর) আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তির নাম আমরা পেয়েছি। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কারা কারা ছিল এরকম বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় আমরা বলতে চাচ্ছি না।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে সেটাও আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পরিকল্পনা ও অপারেশনে কারা কারা ছিল এরই মধ্যে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা আমাদের মূল লক্ষ্য।’
কতজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার টার্গেট ছিল জঙ্গিদের?- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চারজনকে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে দুজনকে তারা নিয়ে যায়। প্রথমে যে চারজন নেমেছে, জঙ্গিরা তাদেরই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। যদি একসঙ্গে বেশি নামতো তাদেরকেও হয়তো নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো তারা। তাদের এমন পরিকল্পনা থাকতে পারে। অপারেশনে যারা ছিল তাদের গ্রেফতার করলে পুরো পরিকল্পনা জানা যাবে।’ তাদের আরও বড় পরিকল্পনা থাকলেও থাকতে পারতো বলে জানান তিনি।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, ‘আদালতে হাজিরা দিতে আসেন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গিরা। প্রত্যেক আসামিই জঙ্গি সংগঠনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সব সদস্যকে সিটিটিসি ২০১৬ সালে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের মাধ্যমে তাদের বেশকিছু অপারেশন ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত ও উদঘাটিত হয়। তাদের ফের গ্রেফতার করা আমাদের কাছে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া করা হয়েছে। তবে রেড অ্যালার্ট বলতে কোনো শব্দ পুলিশি ভাষায় আছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা প্রতিটি পয়েন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি যেন পলাতক জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে অথবা কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে। সব ব্যবস্থা পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে।’
এছাড়াও আইজিপি ঘোষণা দিয়েছেন তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। আসাদুজ্জামান বলেন, ‘একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্যকে সতর্ক করা হয়েছে। যেন কোনোভাবেই পলাতক জঙ্গিরা নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে।’
সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়াকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘অপারেশনের নেতৃত্ব জিয়া দেননি। যে অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছে তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। তবে তার নামটি এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নতুন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের নিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি তৈরি হয়েছে। আনসার আল ইসলামেরও নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র পেয়েছি। তবে গতকালের জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার অপারেশনে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো হাত নেই।’
এদিকে, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় কোর্ট পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞানামা আসামি করা হয় আরও সাত/আট জনকে। অপরদিকে, আগে থেকেই আটক ১০ জঙ্গিকে এ ঘটনায় আরও ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা পাঁচ/ছয়জন সদস্য আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। এছাড়াও আদালতের আশপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করে। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম