আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে পড়েছে: মির্জা ফখরুল
২৩ নভেম্বর ২০২২ ১৫:১৮
ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ পুরানো একটি রাজনৈতিক দল। মুক্তি সংগ্রামে দলটির লড়াই সংগ্রাম করেছে। অথচ আজ দলটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণের দুঃখ-কষ্ট চোখে দেখতে পায় না। এই দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। তাই দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সেজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে হবে।’
বুধবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘দেউলিয়াত্ব ঘোচাতে দুর্ভিক্ষের নাটক? দেশ কোনো পথে?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারীর নেতা আকতার হোসেন, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিল্লুর চৌধুরী দীপুসহ আরও অনেকে। সভায় মূল প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন ডা. জিল্লুর রহমান।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচন আসলেই সরকার নানা ধরনের নাটক শুরু করে। ইতিমধ্যে সরকারের নাটক শুরু হয়েছে। তাদের নতুন নাটক জঙ্গি ছিনতাই। এবার সরকার কোনো নাটক করে পার পাবে না। সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পতন ঘটিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশের জন্য সরকার জায়গার জন্য অনুমতি দেয়নি। সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের অনুমতি না দিলে বিএনপি অফিসের সামনে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
অনুষ্ঠানের মূল প্রবদ্ধে বলা হয়, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রায় দেড় দশকের লুটপাট আর অপশাসনের কারণে বাংলাদেশ আজ দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে। এই সংকটে সাধারণ মানুষ তার জীবনযাপনের অত্যাবশ্যকীয় অনেক বিষয় কাটছাঁট করে কোনোরকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানেও মানুষ স্থির থাকতে পারছে না। খাবারের পরিমাণ কমাচ্ছে, না খেয়ে থাকছেন দরিদ্র মানুষ।’
দেশের ডলার রিজার্ভ প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘একটা স্বৈরাচারী দেশে যা হয়, সরকার ক্রমাগত তথ্য বিকৃত করতে থাকে। নানা ক্ষেত্রে এই চেষ্টা চলে। গত কয়েক মাস থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই প্রশ্ন চলছেই— দেশের ডলার রিজার্ভ আসলে কত?’
বৈদেশিক ঋণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দুই বছরে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছর স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি ঋণ দ্রুত বেড়েছে।
এছাড়াও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই বিলিয়ন ডলারের মতো বকেয়া রয়েছে। এই ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে অকল্পনীয় পরিমাণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনা এবং ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া নিয়ে দেশে প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অনেকগুলোকেই বৈদেশিক মুদ্রায় বিদ্যুতের মূল্য এবং ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছিল। অর্থাৎ, এই খাত থেকেই মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রার নয়-ছয় হয়েছে বলেও ওই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, শীতের সময়টা বিদ্যুতের চাহিদা কম আছে, তাই জ্বালানি কম আমদানি করলেও কিছুটা চলছে। কিন্তু মার্চে যখন গরম পড়তে শুরু করবে তখন তেল এবং গ্যাসের মতো প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধির বিরাট চাপ যুক্ত হবে। সর্বোপরি আছে বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং কিস্তি পরিশোধ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্বাচনের আগে আইএমএফের দুইটি কিস্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থ হবে এক বিলিয়ন ডলারেরও কম। সঙ্গে স্বল্প মেয়াদে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাশিত ঋণ প্রাপ্তি যোগ করলে তা আড়াই বিলিয়ন ডলার হবে। এসব কিছু যোগ-বিয়োগ করলে কাগজে-কলমে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২৬ বিলিয়নকে খুব তুচ্ছ মনে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস