ভোটের বার্তা নিয়ে জনতার দুয়ারে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, প্রস্তুত যশোর
২৩ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৩১
ঢাকা: টানা মেয়াদে সরকারে থেকে দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জয়গান নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও জনতার দুয়ারে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলতি বছরেই পদ্মা সেতু, মধুমতি সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে যশোরসহ ওই জনপদের বিভিন্ন জেলার মানুষ বিভিন্নভাবে উপকারভোগী হয়েছে। তাই একদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, অন্যদিকে করোনাকালে ঘরবন্দির ঘেরাটোপ থেকে জনতার কাতারে সরকার ও দলের বার্তা পৌঁছে দিতে ভোটের মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনতার দুয়ারে গিয়ে সরকার ও দলীয় বার্তা পৌঁছে দিতে যশোর থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) যাত্রা শুরু করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আগামী দিনে তার সরকারের লক্ষ্য উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণ। যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় দেশবাসীর উদ্দেশে তার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের সেই বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় বিপুল লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসাহ-উদ্দীপনা এখন যশোরসহ পাশ্ববর্তী জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে। এরপর ৪ ও ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংস থেকে পাঠানো সফরসূচিতে জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২’-এ যোগদানের লক্ষ্যে যশোরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টায় ওই কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। এর পর দুপুর আড়াইটায় যশোর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানবাহিনী ঘাঁটি থেকে বিকেলে সাড়ে চারটায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধির কারণে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে কোনো দলীয় কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি কমে যাওয়া এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই যশোরের জনসভাই হবে ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কোনো সরাসরি অংশ নেওয়া কর্মসূচি। এর মাধ্যমে তিনি দেশব্যাপী দলীয় কার্যক্রমেরও সূচনা করতে যাচ্ছেন। এরপর ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এছাড়া বিগত টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যেসব উন্নয়ন করেছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। সেই সময় উনাকে স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়েছে। উনি সরাসরি মানুষের কাছে যেতে পারেনি। কিন্তু সমস্ত অনুষ্ঠানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন। এখন জনগণ শেখ হাসিনাকে চায়, তার মুখ থেকে কিছু শুনতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ হয়েছে। এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সংকট থেকে বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সেই সংকটের কিছু ছোঁয়া, কিছু আঁচড় বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এই মূহূর্তে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটা কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে। কাজেই মানুষ শেখ হাসিনার কাছে কিছু শুনতে চান, আর জানতে চান। আর শেখ হাসিনাও কিন্তু মানুষের কাছে যেতে চান। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চান।’
নানক আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা যে, তিনি কোনোকিছু গোপন রাখেন না। তিনি সবকিছু অবহিত করেন তার প্রিয় জনগণকে। সে কারণে তিনি কিন্তু জনগণকে বলেন, এখন এই ধরনের সংকট আছে। সেই সংকট থেকে উত্তরণে আমরা আমাদের চেষ্টার কোনো ক্রটি করছি না। এইকথাগুলো তিনি কিন্তু বলেন। সেকারণেই তিনি সরসারি জনগণের কাছে যাচ্ছেন।’
বিএনপি সারাদেশে রাজপথে সমাবেশ করছে, সরকার পতনের হুমকি দিচ্ছে; তার পাল্টাপাল্টি আপনারা জনসভা শুরু করছেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে নানক বলেন, ‘বিএনপি ছোট সমাবেশ করেছে, না মাঝারি সমাবেশে করেছে, না বড় সমাবেশ করেছে, না অনেক বড় সমাবেশ করেছে? এটি ফিতা দিয়ে মাপতে চাই না। আমি শুধু বলতে চাই, বিএনপির সমাবেশের মানুষরাই কিন্তু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ না। জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন যাচ্ছেন মানুষদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। মানুষকে অবহিত করার জন্য। উনি কিন্তু বলেছেন, আমি করোনার আগে যেসব জেলায় যেতে পারিনি সেখানে প্রথম যাব। উনি জনগণের নেতা, তিনি তো জনগণের কাছেই যাবেন। এটি কোনো পাল্টাপাল্টি বিষয় না।’
এদিকে, বুধবার (২৩ নভেম্বর) জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘জনসভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যশোরসহ আশপাশের এলাকার কোনো মানুষ ঘরে থাকবে না। তারা বৃহত্তর যশোরের উন্নয়নে রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কথা শুনতে আসবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, খুলনা বিভাগীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগদানের সকল প্রস্তুত সম্পন্ন করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভাকে ঘিরে এই এলাকার মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোর স্টেডিয়ামের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। একই স্টেডিয়ামে ৫০ বছর পর ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ জনসভায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতিটি ইউনিট। ইতোমধ্যে স্টেডিয়ামসহ গোটা শহরজুড়ে নতুনরূপে সাজসজ্জা, ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের উত্তরপাশের জীর্ণ গ্যালারি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে স্টেডিয়াম ও ডা. আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠ একাকার হয়েছে। বিশাল মাঠে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ জনসভা জনসমুদ্রে রূপ দিতে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন সাতদিন ধরে যশোরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় কর্মীসভা, বর্ধিত সভা, পথসভা করে চলেছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এছাড়াও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক শুধু যশোরই নয়, পাশ্ববর্তী জেলা-উপজেলায় গণসংযোগ, কর্মীসভা করেছেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম