ওবায়দুল কাদেরের মতো ডায়নামিক মন্ত্রী খুব কমই আছে: প্রধানমন্ত্রী
২৬ নভেম্বর ২০২২ ১২:৩৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসা করে বলেছেন, সব থেকে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য হচ্ছে আমাদের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কারণ তার মতো এতো কর্মঠ এবং ডায়নামিক মন্ত্রী খুব কমই আছে। একদিকে তিনি পার্টির সেক্রেটারি, আবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার কাজের চাপ অনেক কমে গেছে।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে গণভবন থেকে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে’র টিউবের কাজ সমাপ্তির উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য প্রদানকালে ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
টানেল নিমার্ণে চীনা সরকারের সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সহযোগিতা করার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তখনকার প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের বর্তমান কেবিনেট সেক্রোটারি খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে। তার মতো একজন ডায়নামিক অফিসার ছিল বলে খুব দ্রুত এটা আমরা করতে পেরেছি। সেই সঙ্গে সেতু বিভাগের যারা কর্মরত তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই। সেই সময় যারা কাজ করেছেন। তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য হচ্ছে আমাদের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কারণ তার মতো এতো কর্মঠ এবং ডায়নামিক মন্ত্রী খুব কমই আছে। তিনি একাধারে যেমন পার্টির সেক্রেটারি পার্টিও চালাচ্ছে। বরং আমি বলতে পারি তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার কাজের চাপ অনেক কমে গেছে। কারণ অনেক দায়িত্ব সে নিয়ে গেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে সারা বাংলাদেশে আজকে আমাদের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেকটা সেতু, উন্নত মানের রাস্তা করা, সেই সাথে টানেল নির্মাণ, সব ব্যাপারে তার যে বলিষ্ট ভূমিকা, অগ্রণী ভূমিকা সেই জন্য তাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে কাজ করার ইচ্ছা থাকতে পারে কিন্তু কাজ করার মতো লোক দরকার। আমার সৌভাগ্য আমি দেখেছি যারা সঙ্গে কাজ করছে, প্রত্যেকের একটা আন্তরিকতা আছে। দেশপ্রেম আছে, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে, জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে বলেই আমরা এত দ্রুত বাংলাদেশকে উন্নত করতে পারছি।’
মাত্র কিছুদিন আগে এক সঙ্গে ১০০টি ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়েছে। এটাও একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আমাদের সড়ক ও সেতুবিভাগ। সে জন্য মন্ত্রীসহ সড়ক ও সেতুবিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।
টানেলের নিরাপত্তার কাছে নিয়োজিত নৌবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। একইসঙ্গে স্থানীয় জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘যেকোনো একটা উন্নয়নের কাজ করতে গেলে অনেক সময় স্থানীয় জনগণ বাধা দেয়। কিন্তু এই কাজটা করার সময় মানুষের যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছি ঠিক পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তাই দেখেছি। স্থানীয় লোক নিজের ঘরবাড়ি বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি সব ছেড়ে দিতে হলে তারা ছাড়তে রাজি ছিল। কারণ দেশের উন্নয়ন হোক। ঠিক এই টানেল নির্মাণের সময়ও চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকে সেই সহযোগিতা পেয়েছি।’
দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রামে উদযাপনের স্থান পরিদর্শন করেছেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আহমদ কায়কাউস জানান, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে টানেলের সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই টানেলটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন এবং ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিমি এবং এতে দু’টি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দু’টি লেন রয়েছে। এই দু’টি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলিতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ