‘আমাদের বিরোধী দল চোখ থাকতে অন্ধ’
২৬ নভেম্বর ২০২২ ১৫:১৭
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অপজিশনের (বিরোধী দল) বোধ হয় চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে। অর্থ চোরাচালান করতে পারবে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে, অর্থ-অস্ত্র চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করতে পারবে না।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে’র দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি ঘোষণার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথম টানেলের কাজের এই সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে আর্থ সামাজিক খাতে উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের যেটা লক্ষ্য, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশকে বদলে দেওয়া। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ যেভাবে জাতির পিতা চেয়েছিলেন, আমরা ঠিক সেইপথেই যাত্রা শুরু করেছি। আমি বিশ্বাস করি এই দেশে দারিদ্র্য থাকবে না। এই দেশে দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর খাবারের জন্য হাহাকার করতে হয় না।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় সারা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি অনেকে দেশ নিজেদের দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ঘোষণাও দিয়েছে। আমরা এখনও সেই দুর্ভাগ্যজনক অবস্থায় পড়ি নাই। আমাদের যেটুকু আছে নিজেদের সম্পদ আমরা ব্যবহার করার সক্ষমতা রাখি। সেটা করে যাচ্ছি। তাছাড়া আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছি, যার যেখানে যতটুকু জমি বা জলাধার যাই আছে উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করবো। কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। সেই নীতি নিয়ে সবাইকে চলার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পানি ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে একদিকে করোনা ভাইরাসের মন্দা, অপরদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও স্যাংশন। তার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি একটা বিরাট সমস্যা সারা বিশ্বব্যাপী। তার ধাক্কা থেকে আমরাও দূরে না। আমাদের উপর তার আঘাত এসে পড়েছে। তারপরও আমরা অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি এবং এটা আমরা রাখতে পারবো যদি দেশবাসী এ বিষয়ে সজাগ হন, নিজেদের সঞ্চয় বাড়ান, মিতব্যয়ী হন। তাহলেই কিন্তু কখনো এই ধরনের মন্দায় পরবো না। আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।’
শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে এবং সমুদ্র সম্পদ যাতে কাজে লাগাতে পারেন সেই পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। তাদের মনে হয় চোখ নষ্ট। যদি চোখ নষ্ট হয়, চোখের ডাক্তার দেখাতে পারে। আমরা খুব ভালো ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে চোখ দেখিয়ে আমার মনে হয় তারা দেখতে পাবে। আর কেউ যদি চোখ থাকতে অন্ধ হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের অপজিশনের বোধ হয় চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। হ্যাঁ, ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে। অর্থ চোরাচালান করতে পারবে, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে, অর্থ-অস্ত্র চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করতে পারবে না। এটা হলো বাস্তবতা।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ একটা বিরাট অর্জন দাবি করে এর উদ্বোধন করতে পারায় অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
গণভবন প্রান্ত থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে গণভবন প্রান্তে বক্তব্য রাখেন, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। টানেল প্রান্ত থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এছাড়া চট্টগ্রামের টানেলস্থলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতারাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ