Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হয় আমারে ফাঁসি দিক, নয় তারে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আমি বিচার চাই, আমি তার ফাঁসি চাই। হয় আমারে ফাঁসি দিক, নয়তো তারে।’- চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বুক চাপড়ে এমন আহাজারি করছিলেন শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতের মা সাহিদা আক্তার তামান্না।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকালে আয়াত খুনের মামলায় গ্রেফতার আবির আলীকে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শুনানির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আদালতে। আগে থেকেই তার ফাঁসির দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ করছিলেন আয়াতের পরিবার ও এলাকার লোকজন।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) টিম যখন গাড়িতে করে বিক্ষোভরতদের সামনে দিয়ে আবির আলীকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় উত্তেজিত লোকজন আয়াতকে বহনকারী গাড়ির দিকে তেড়ে যান। তারা ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। আবিরকে দেখে আয়াতের মা বুক চাপড়ে আহাজারি করতে থাকেন।

আয়াত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) মনোজ কুমার দে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আবির আলীকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আদালত এলাকায় কয়েক’শ লোক তার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করছিল। আমাদের গাড়ি যাওয়ার সময় তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেখানে আয়াতের বাবা-মাকেও দেখেছি। তবে এতে আমাদের কাজের কোনো সমস্যা হয়নি। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

আবির আলী (১৯) নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা আজহারুল ইসলামের ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। শিশু আয়াতকে খুনের মামলায় তার সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পেয়ে গত ২৪ নভেম্বর রাতে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

গ্রেফতারের পর আবিরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই জানায়, আয়াতকে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ কেটে ছয় টুকরো করে আবির। এর মধ্যে প্যাকেটবন্দি তিন টুকরো নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোডসংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। বাকি তিন টুকরো একইভাবে আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয়। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে পিবিআই টিম আবিরকে নিয়ে ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে।

বিজ্ঞাপন

এরপর তার দেওয়া তথ্য আরও যাচাই এবং আনুষাঙ্গিক প্রমাণ সংগ্রহে পিবিআই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে। প্রথম দফায় গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) আবিরকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। সোমবার দ্বিতীয় দফায় আরও সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে থাকা আবিরকে নিয়ে রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে পিবিআই টিম ফের সেই স্থানগুলোতে যায়। তখন আয়াতের বাবাসহ স্বজনরা তাকে দেখে সেখানে বুক চাপড়ে আহাজারি শুরু করেন। স্থানীয় কয়েক’শ লোক জড়ো হয়ে আবিরের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

আয়াতের বাবা সোহেল রানা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রাস্তায় বসে যান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সে (আবির) মিথ্যা কথা বলছে। তাকে রিমান্ডে নিলে সে আমার মেয়ের লাশ কোথায় ফেলেছে দেখিয়ে দেবে। আমার মেয়েটার কি অপরাধ ছিল ? কেন তার লাশ পাচ্ছি না। কোথায় লাশ ? কিছু আলামত পেলে মনকে বোঝাতে পারতাম।’

আয়াতের দাদা মনজুর আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তার (আবির) মা আর বোন সব জানে। সেই বাসায় একজন মানুষকে সে কেটে রেখে দিল আর তার মা-বোন জানবে না, এটা হয় না। পুলিশ তার মা-বোনকে গ্রেফতার করছে না কেন? সঠিক তথ্য কেন বের করা হচ্ছে না ? একটা হাত, পা, একটা জামা পেলেও মনকে বোঝাতে পারতাম। কিছুই পাচ্ছি না।’

উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে চার বছর ১১ মাস বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। ১০ দিন পর আবির আলীকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে নিখোঁজ রহস্যের উদঘাটন হওয়ার কথা জানায় পিবিআই। এ ঘটনায় আয়াতের বাবা বাদী হয়ে নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা দায়ের করেন।

পিবিআইয়ের ভাষ্য মতে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আজহারুলের ছেলে আবির আলী। পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আবিরকে আয়াত ‘চাচ্চু’ বলে সম্বোধন করতো। ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাসার সামনে থেকে আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আবির ঢুকে যায় তার বাবার বাসায়, যেখানে তখন কেউ ছিল না। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করে আবির।

এরপর লাশ ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় নগরীর আকমল আলী সড়কের পকেটগেট বাজার এলাকায় তার মা আলো বেগমের বাসায়। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদের পর আবির মায়ের বাসায় থাকতো। তবে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যে এলাকায়, সেই বাবার বাসায়ও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আবির মায়ের বাসায় নিয়ে লাশ বাথরুমের তাকের ওপর লুকিয়ে রাখে। রাতে সেই লাশ বাথরুমে নিয়ে কেটে ছয় টুকরো করে ছয়টি ব্যাগে ভরে রাখে।

পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরো নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরো আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।

কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সংগ্রহ করা সিম ব্লক থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আবির। আয়াতের খেলার সাথীদের কাছ থেকে তাকে কোলে নেওয়ার তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আবিরের গতিবিধি দেখে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ফাঁসি শিশু আয়াত হত্যাকারী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর