Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা: সাজছে পলোগ্রাউন্ড, নিরাপত্তায় ৭৫০০ পুলিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক দশক পর চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা হতে যাচ্ছে। ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে এই জনসভা নিয়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। মঞ্চ তৈরি, মাঠ সংস্কার, নিরাপত্তার পরিকল্পনা আর প্রচারণা চলছে জোরেশোরে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিকে ঘিরে নগরজুড়ে সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় পলোগ্রাউন্ড মাঠ পরিদর্শন করে জনসভার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত হন। এসময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও সেখানে ছিলেন।

মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশপথ থেকে জনসভাস্থলে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সীমানা। ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। মূল মঞ্চের সীমানায় পুলিশ অবস্থান নিয়ে কাউকে ভেতরে যেতে দিচ্ছে না। এসএসএফ’র সদস্যদের তদারকি দেখা গেছে।

পৌনে ৫ লাখ বর্গফুটের পলোগ্রাউন্ড ময়দানের শেষপ্রান্তে ১৬০ ফুট লম্বা নৌকার আদলে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ। নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দাবি করেছেন, পলোগ্রাউন্ডে এর আগে কোনো জনসভায় এত বড়ো মঞ্চ তৈরি হয়নি।

মঞ্চ নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন ৪৭ বছরের পুরনো চট্টগ্রামের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান সাহাবউদ্দিন ডেকোরেটরস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নগরীর ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. সাহাবউদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, নৌকার আদলে তৈরি মঞ্চের মোট দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট। এর মধ্যে মূল মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৯০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০ ফুট, যাতে ২০০ জন বসার ব্যবস্থা থাকছে। মঞ্চের উচ্চতা ৬ ফুট।

বিজ্ঞাপন

মূল মঞ্চের পশ্চিমে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের বসার জন্য আলাদা মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। পূর্বদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এবং মাঝখানে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান সংরক্ষিত রাখা হচ্ছে। মূল মঞ্চ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এরপর থেকে দর্শক বসতে পারবেন।

সাহাবউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালে আমার প্রতিষ্ঠান চালু হয়। এ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্তঃত এক হাজার জনসভার মঞ্চ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যখন এই পলোগ্রাউন্ডে সর্বশেষ জনসভা করেন, সেই মঞ্চও আমরা করেছি। এরপর ২০১৮ সালে পটিয়ায় জনসভার মঞ্চ করেছি। এবারের মতো বড়ো মঞ্চ চট্টগ্রামে আগে কখনো আমরা করিনি।’

ঢাকার কলরেডি থেকে ৩০০ মাইক ভাড়া করা হয়েছে জনসভার জন্য। সাহাবউদ্দিন জানিয়েছেন, জনসভাস্থলের পাশাপাশি স্টেশন রোড, সিআরবি, নিউমার্কেট, কদমতলী, দেওয়ানহাট এলাকা পর্যন্ত মাইক থাকবে।

এদিকে মাঠ পরিদর্শনের পর নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ উৎসবমুখর পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচি সম্পন্ন করার জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা চান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স। তাদের তত্ত্বাবধানে এবং পরামর্শক্রমে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকবে। সিএমপিতে আমাদের ছয় হাজারের মতো অফিসার-ফোর্স আছে। এর অধিকাংশই বিভিন্নভাবে সিকিউরিটির সাথে সংযুক্ত থাকবে। বাইরে থেকে দেড় হাজার ফোর্স সিএমপিতে যুক্ত থাকবে।’

‘এসএসএফ, পিজিএফ, সাদা পোশাকের পুলিশ, ইউনিফর্মের পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তায় আর্চওয়ে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ড্রোনসহ প্রযুক্তিগত সকল কিছু যুক্ত থাকবে। প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিচ্ছি। শুধু পলোগ্রাউন্ডেই পুলিশ থাকবে না, পুরো শহর একটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ মোতায়েন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সর্বোচ্চ ফোর্স কখন মোতায়েন হবে, এটা আমরা পাবলিকলি ওপেন করি না। এ বিষয়ে আমাদের কাছে নির্দেশনা যেভাবে এসেছে এবং আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, সেভাবেই কাজ করব। পুলিশ এখন থেকেই কাজ করছে নিরাপত্তার, এক ধরনের মোতায়েন হয়ে গেছে।’

জনসভার দিন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা গাড়ি নিয়ে, মিছিল নিয়ে জনসভায় আসবেন, তারা কোথায় গাড়ি থেকে নামবেন, মিছিল কোথায় থামবে- সেটা আমরা জানিয়ে দেব। একটি বিষয় হচ্ছে- জনসভার দিন কিন্তু সকাল এবং বিকেলের শিফটে পরীক্ষা আছে। দুই শিফটে এক হাজার চারশর মতো করে পরীক্ষার্থী আছে। জনসভাস্থলের পাশেও একটি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। শব্দযন্ত্র এমনভাবে স্থাপন করা হবে, যাতে সেখানে কোনো সমস্যা না হয়।’

‘পরীক্ষার্থীরা যেন একটু আগেভাগে বাসা থেকে বের হন। এরপরও কেউ আটকে গেলে কিংবা সমস্যায় পড়লে ট্রিপল নাইনে ফোন করে আমাদের জানালে পুলিশ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ, হাতে অন্তঃত এক ঘণ্টা সময় নিয়ে যেন সবাই বাসা থেকে বের হন।’

জনসভার আগে লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা নেয়ার একটি নির্দেশনা পাবার কথা জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।

জনসভার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের যে সক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের সক্ষমতার নিরিখে এটা আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কোনো হুমকি নেই, কোনো হুমকি সৃষ্টি করারও সুযোগ নেই।’

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করেছে। সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ’দশ বছর পর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নগরীতে কোনো জনসভায় আসছেন। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে সাংগঠনিক প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। জনসভার মাঠে প্রস্তুতির কাজ চলছে। সাংগঠনিক প্রচারণার কাজও চলছে।’

জনসমাগমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জন্য অনেক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছেন। অনেকগুলোর কাজ শেষ হয়েছে, অনেকগুলো বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। এছাড়াও আরও উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনাধীন আছে। এজন্য চট্টগ্রামবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। চট্টগ্রামবাসী নিজেরাই দলে দলে জনসভায় যোগ দেবেন।’

‘এরপর আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান বা শক্তির ওপর ভিত্তি করে বলছি, এই পলোগ্রাউন্ড ময়দান পরিপূর্ণ করা আমাদের জন্য কোনো বিষয় নয়। পলোগ্রাউন্ডের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। পুরো নগর জনসভাস্থলে পরিণত হবে।’

স্থান সংকুলান না হওয়ার বিষয় জানিয়ে চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা থেকে ‘অতি উৎসাহী’ নেতাকর্মীদের জনসভায় না আসার অনুরোধ করেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর