শেখ হাসিনার জনসভা: ‘পোস্টার-ব্যানারে’ ছেয়ে গেছে চট্টগ্রাম
১ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পোস্টার আর ডিজিটাল ব্যানারে ছেয়ে গেছে বন্দরনগরী। ব্যস্ত সড়ক, অলিগলি, উড়াল সেতু, সড়ক বিভাজক, ফুটপাত- বলতে গেলে সবখানের চিত্রই একই রকম। মূল সংগঠন কিংবা সহযোগী, পদ আছে কিংবা পদ নেই, পোস্টার-ব্যানারে বড় বড় ছবি। ৬০ বর্গমাইলের চট্টগ্রাম মহানগরীর পুরোটাই যেন সয়লাব হয়ে গেছে পোস্টার আর ব্যানারে।
এই প্রচারণা ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার জন্য। কতটা জনসভার প্রচার আর কতটা আত্মপ্রচার- এমন আলোচনাকে একপাশে রেখেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীকে এমন সাজে সাজিয়ে তুলেছেন।
কোনোটিতে বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কোনোটিতে আ জ ম নাছির উদ্দীন, কোথাও আবার স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ছবি বড় করে শোভা পাচ্ছে। আবার কিছু কিছু পোস্টার-ব্যানারে নেতার ছবির চেয়ে বড় হয়ে গেছে প্রচারকারীর নিজের ছবি।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, লালখান বাজার, আক্তারুজ্জামন ফ্লাইওভারের প্রবেশপথ, টাইগারপাস, কাজির দেউড়ির মোড়, সার্কিট হাউজের মোড়ে, আগ্রাবাদ লাকী প্লাজার মোড়- বিভিন্ন পয়েন্টে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মাঝখানে বানানো হয়েছে তোরণ। নেতার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের উদ্যোগেও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বানানো হয়েছে তোরণ।
লালখান বাজার থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ওপর দাঁড়ালে যেদিকেই চোখ যায় শুধু বিভিন্ন নেতাদের নামে ব্যানার আর পোস্টারের দেখা মেলে। কে কার চেয়ে কত বড় ব্যানার লাগাচ্ছেন, যেন চলছে সেই প্রতিযোগিতা !
প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতাকর্মীদের যার যার অবস্থান থেকে এলাকায়-এলাকায় প্রচারণা চালাতে। নিজেদের মতো করে প্রচারণার ক্ষেত্রে কাউকে নিষেধ করা হয়নি।’
পোস্টার-ব্যানারে প্রচারে আরও গতি বাড়িয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্ভাব্য কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা। গত ৩০ মে নগর যুবলীগের সম্মেলন হলেও এখনো কমিটি পায়নি সংগঠনটি। পদপ্রত্যাশীরা ভাবছেন, জনসভা সফল করতে যারা বেশি ভূমিকা রাখবেন, তারাই এগিয়ে থাকবেন। ২৯ নভেম্বর জনসভার প্রস্তুতি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ যুবলীগের সভায় কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ নেতাদের জমায়েতের টার্গেট বেঁধে দিয়ে প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর পদপ্রত্যাশীদের আগ্রহ-উদ্দীপনা দ্বিগুণ হয়েছে।
জানকে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী এম আর আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসছেন। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান প্রস্তুতি সভায় যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা মেনেই আমরা কাজ করছি। ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন লাগানোর পাশাপাশি সভা-সমাবেশ, মিছিলের মধ্য দিয়ে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’
শুধু যুবলীগ নয়, ডিসেম্বরেই চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনুসারীদের মাধ্যমে বড় বড় পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে নেতা রাজনীতিতে কতোটা নিবেদিত, সেটা প্রমাণের চেষ্টা চলছে। গুরুত্বপুর্ণ পদে যেন নিজের নামটা দেখা যায়!
নেতাকর্মীদের মধ্যে এ-ও আলোচনা আছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শক্তি-সামর্থ্য জানান দেওয়ারও জোর চেষ্টা আছে নেতাদের মধ্যে। শুধু আওয়ামী লীগ কিংবা যুবলীগ নয়, ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পিছিয়ে নেই পোস্টার-ব্যানারে। ‘ছাত্রনেতারা’ নিজেদের বড় বড় ছবি দিয়েছেন ইউনিটের-গ্রুপের ‘বড়’ নেতা কিংবা মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকা মূল দলের নেতাদের সঙ্গে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘসময় পর চট্টগ্রাম নগরীতে কোনো রাজনৈতিক সভায় আসছেন। তাই নেতাকর্মীরা উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নেত্রীকে স্বাগত জানাতে ব্যানার, পোস্টার লাগিয়েছে। এটা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বাইরে কিছু নয়। এক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি থাকলেও সেটা সাংগঠনিক জ্ঞানের অভাবে বলে মনে করি।’
জনসভাস্থল পলোগ্রাউণ্ড মাঠও ছেয়ে গেলে পোস্টার-ব্যানারে। জনসভাস্থল তো বটেই, পাশের একটি বিদ্যালয়ের জানালাও ঢেকে গেছে ডিজিটাল ব্যানারে। এর আগে নিরাপত্তার ইস্যুতে পুলিশের পক্ষ থেকে এবার পোস্টার-ব্যানারগুলো নামিয়ে ফেলা হলেও দিন পার করে আবার উঠে গেছে সেগুলো।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, ‘সমাবেশস্থলে নেতাদের কোনো ব্যানার থাকবে না। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যানার লাগানো হবে। যেসব ব্যানার লাগানো হয়েছে, সেগুলো আগামীকালের (শুক্রবার) মধ্যে খুলে ফেলা হবে।’
এদিকে, শুধু মহানগর নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, উপজেলা-ইউনিয়ন, গ্রামগঞ্জেও লাগানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার পোস্টার-ব্যানার। পোস্টার-ব্যানারে ‘নেতা আর নেতায়’ সয়লাব বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।
২০১২ সালের পর আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভা হতে যাচ্ছে, যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম