Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংকট নিরসনে আর্থিক স্থিতিশীলতা জরুরি: বিআইডিএসের গবেষণা সম্মেলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:০২

ঢাকা: বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে না তাকিয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে প্রয়োজনে প্রবৃদ্ধি সেক্রিফাইস করে হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হোক।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে এমন তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ধরা হয়েছে ‘পোস্ট কোভিড ইন এন ইউক্রেন এন্ড ডিভিসাইভ ওয়ার্ল্ড।’

বিজ্ঞাপন

প্রথম দিন সন্মেলনে প্রায় ৯টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান শফিক আহমেদ। দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এসময় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান।

মূল প্রবন্ধে শফিক আহমেদ বলেন, ‘করোনা মহামারি পরবর্তী অবস্থায় বাংলাদেশ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে যে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না। কেননা এখন প্রবৃদ্ধিও নিজে নজর দেওয়ার সময় নয়। এখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সুদের হারের ক্যাপ তুলে দেওয়া, মুদ্রা বিনিয়ম হার বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, এলসি খোলা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। চাহিদার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ কাঠামোগত সংস্কার দরকার। বিশেষ করে একটি কর কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কেননা বাংলাদেশের কর আদায় হার বিশ্বের প্রায় সব দেশের চেয়ে কম। এ সব উদ্যোগ নিলে চলতি অর্থবছর হয়ত প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সেটিও খারাপ হবে না।’

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘অর্থনীতিতে ইতিবাচক মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। জিডিপির তুলনায় কর আদায়কে মন্দ বলা হয়েছে। কিন্তু এত যদি ভয়ংকর অবস্থা হয় তাহলে ৫/৬/৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় কীভাবে। নিশ্চই রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি কিছু একটা কিছু দিয়ে পুষিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রাজস্ব খাতে বড় উল্লম্ফন আশা করা যায় না। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে কর আদায় বাড়ানো। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপর ধরে রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে কমে এসেছে। এটি বিবিএসর তথ্য। আমরা বিবিএস এবং বিআইডিএসের ওপরে আমাদের আস্থা রাখতে চাই।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে। কিন্তু এটা অতি সংরক্ষণশীল। বুঝতে পারছি না আইএমএফ এর পূর্বাভাসকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের চার মাসে অর্থনেতিক সূচক গুলো ভালো অবস্থানে আছে। তাই এ বছর ৭ শতাংশের ওপর অবশ্যই জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋনের সুদ হার ৯ ও ৬ এর পরিবর্তে ৯ এবং ১২ শতাংশ পর্যন্ত করা যেতে পারে। এটি ভেবে দেখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

এ ছাড়াও কর কমিশন গঠন না করে রাজস্ব বোর্ডক অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে আলাদা করে স্বাধীন করা যায কিনা সেটি ভাবতে হবে। অর্থনৈতিক সূচক গুলোর অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ৪ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ দশমিক ১৯৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছর একই সময় ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া রফতানি ১৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে গত অর্থ অর্থবছর ছিল ১৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আমদানি হয়েছে ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর ৪ মাসে ছিল ১৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর ছিল ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার। দেখা যাচ্ছে প্রধান সূচক গুলোতে উদ্ধমূখী প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে, তবে শিল্প ও মেয়াদী ঋণের সুদের হার এই মহুত্বে ক্যাপ তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ভালো সময় আসলে তখন তুলে দেওয়া যাবে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বে যারা নরডিক বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অর্থনৈতিক মডেলের অনুসারী, যার মধ্যে বিশেষ করে নরওয়েকে আদর্শ দেশ হিসাবে চিহিৃত করা হয়। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এসব দেশে আয়-বৈষম্য সবচেয়ে কম। তবে শিল্পোন্নত দেশের সামাজিক গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা করা এ প্রবন্ধের বিষয় নয়, বরং সমসাময়িক উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির সমন্বয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করা যায় কিনা, তা নিয়ে কিছু প্রাথমিক চিন্তা ভাবনাই এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা, প্রাচুর্যের পাশাপাশি চরম বৈষম্য ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্রমবর্ধমান আধিপত্য এ ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতি বর্তমান কালের একচ্ছত্র প্রভাবশালী অর্থনৈতিক দর্শন হিসাবে আবির্ভূত হলেও একে ক্ষোভ ও এক ধরনের অনিবার্যতার দৃষ্টি থেকে দেখা হচ্ছে।’

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘আমাদের দেশে চরম বৈষম্য বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে সব কিছুই বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। বাজার ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এছাড়া ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা জরুরি। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। বর্তমান সিস্টেমের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই বৈষম্য কমবে।’

তিনি বলেন, ‘কল্যাণমূলক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে গ্রাস করছে অর্থনৈতিক ক্ষমতা। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শরু কওে সব জায়গায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা জনপ্রতিনিধিতে পরিণত হচ্ছেন।’

সারাবাংলা/জেজে/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর