পলোগ্রাউন্ড থেকে: দশ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে আক্ষরিক অর্থেই উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে। কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, মীরসরাই থেকে বাঁশখালী-লোহাগাড়া, সব পথ যেন মিশেছে এক হয়ে পলোগ্রাউন্ডে।
পুরো শহর যেন মিছিল-স্লোগানের জনপদ, জয় বাংলা, শেখ হাসিনা আর নৌকা ধ্বনিতে মুখরিত। বেলা গড়াতেই পলোগ্রাউন্ডের মাঠ পেরিয়ে বাইরে আরও প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকায় শুধু মানুষ আর মানুষ।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টা থেকে পলোগ্রাউন্ডের মঞ্চে শুরু হয়েছে জনসভার কার্যক্রম। প্রথমে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখছেন।
এর আগে, সকাল থেকে মঞ্চে চলছিল মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশাত্মেবোধক আর রণসঙ্গীত। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ এই গান দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শিল্পীদের পরিবেশিত সঙ্গীত উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করে। গান আর স্লোগান একসাথে ভেসে আসছিল মঞ্চ এবং মাঠ থেকে।
সকাল থেকেই মূল মঞ্চে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামের নেতারা। পশ্চিমে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের জন্য তৈরি আলাদা মঞ্চও প্রায় ভরে গেছে। পূর্বদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এবং মাঝখানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত নির্দিষ্ট স্থান সকালেই পূর্ণ হয়ে যায়।
ভোরের আলো ফোটার ক্ষণ থেকেই নেতাকর্মীরা শহর-গ্রাম থেকে গাড়িতে, পায়ে হেঁটে পথ ধরেন পলোগ্রাউন্ডের। সকালেই রাউজান থেকে হাজারো মানুষের মিছিল নিয়ে আসেন সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী পটিয়া থেকে সীতাকুণ্ড থেকে দিদারুল ইসলাম দিদার, সন্দ্বীপ থেকে মাহফুজুর রহমান মিতা বড়ো মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসেন।
অন্যদিকে সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে শুধু মিছিল আর মিছিলের দেখা মিলছে। প্রতি মিছিলে ঢোলবাদ্য, গান আর স্লোগান। কারও গায়ে হলুদ গেঞ্জি, কেউ-বা সাদা, কেউ লাল-সবুজ। হাতে হাতে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা আর নৌকার ছবি।
প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাংসদ আফছারুল আমীন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের ছবিসম্বলিত আলাদা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল এগিয়ে যেতে দেখা গেছে নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড-ইউনিট থেকে আসা নেতাকর্মীদের।
প্রত্যেক সংসদীয় আসন থেকে এমপিদের নেতৃত্বে আলাদা মিছিল এসেছে। এছাড়া স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বেও এসেছে মিছিল।
নগরীর কাজির দেউড়ি, লাভ লেইন, ওয়াসার মোড়, লালখান বাজার, টাইগারপাস, সিআরবি, নিউমার্কেট, কদমতলী, আগ্রাবাদ এলাকার সড়কগুলো মিছিলে-মিছিলে সয়লাব।
সকাল পেরিয়ে বেলা গড়াতেই সাড়ে ১২টার দিকে পৌনে ৫ লাখ বর্গফুটের পলোগ্রাউন্ড ময়দান পূর্ণ হয়ে উপচে পড়ছে মানুষ। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে লাখো মানুষ অপেক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। ময়দানের বাইরে নিউমার্কেট থেকে সিআরবি হয়ে টাইগারপাস পর্যন্ত কার্যত জনস্রোতে অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। পলোগ্রাউন্ডের আশপাশে অন্তঃত আরও দশ কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয়েছে জনসভাস্থলে।
মঞ্চে উপস্থিত চট্টগ্রাম-৮ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দশ বছর পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম নগরীতে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। এজন্য যখনই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, তখন থেকেই আমাদের নেতাকর্মী এবং চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। চট্টগ্রামের জন্য প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিচ্ছেন, তাতে মানুষ জননেত্রীর ওপর আস্থা রেখেছেন। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।’
শনিবার চট্টগ্রামে এসে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছিলেন, জনসভায় তারা দশ লাখ জনসমাগমের টার্গেট নিয়েছেন।
দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা মঞ্চে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেখানে বক্তব্য রেখে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করবেন।
(পলোগ্রাউন্ডে সারাবাংলা টিমে আছেন- শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ও চলন্ত চাকমা, চবি করেসপন্ডেন্ট)