মেট্রোরেলের টিকিট সংগ্রহ এবং যাতায়াত যেভাবে
৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৪৯
ঢাকা: চলতি মাসেই রাজধানী ঢাকায় যাত্রী নিয়ে চলবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল। এর মধ্য দিয়ে দেশের গণপরিবহনে যুক্ত হবে বৈদ্যুতিক কোনো যানবাহন। যা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই নতুন বিষয়। বৈদ্যুতিক এই পরিবহনে কিভাবে যাতায়াত করবেন, টিকিটই বা সংগ্রহ করবেন কিভাবে— এসব নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল সর্ম্পকে জনসাধারণকে বিস্তারিত ধারণা দিতে উত্তরা ডিপো এলাকায় মেট্রোরেল এক্সিবিশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি) নির্মাণ করা হয়েছে। সবাই বিনামূল্যে এই এক্সিবেশন সেন্টার পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন। সেখান থেকেই তারা মেট্রোতে যাতায়াতের ধারণা পাবেন।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় উত্তরা স্টেশন হবে মেট্রোরেলের শুরুর স্টেশন। তিনতলা স্টেশন ভবনের ওপরের তলার প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীরা ট্রেনে উঠবেন। ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতে যাত্রীদের আগে এস্কেলেটর দিয়ে স্টেশনের দ্বিতীয় তলার কনকোর্স হলে প্রবেশ করতে হবে। তবে এস্কেলেটরের পাশাপাশি উপরে ওঠার জন্য লিফটের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিবন্ধী বা প্রবীণ নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই সুবিধা রাখা হয়েছে। এরপরই সেখানে দেখতে পাবেন ডিজিটাল টিকিট কাউন্টার। সেখান থেকে মেশিনে টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করবেন যাত্রীরা।
এছাড়া টিকিট সংগ্রহের জন্য আরও দুই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। কেউ চাইলে টপআপ ও মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারবেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি ম্যানুয়াল কাউন্টারও রয়েছে। যাত্রীরা চাইলে এক বা একাধিক ভ্রমণের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
টিকিট সংগ্রহের পর প্ল্যাটফর্মে ওঠার প্রবেশ পথে নির্ধারিত জায়গায় টিকিট পাঞ্চ করে যাত্রীরা দোতলা থেকে নির্ধারিত এস্কেলেটর বা সিঁড়ি দিয়ে মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে যাবেন। এখানে ট্রেন এসে থামার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যাবে। কিন্তু তখনি আপনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। আগে যাত্রীদের নামতে দিতে হবে তারপরই উঠার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। ট্রেনের দরজার সামনে লেখাও রয়েছে আগে নামতে দিন।
যাত্রী ওঠা-নামা শেষে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্রমণ শেষে ট্রেন থেকে নেমে গেটে কার্ডটি রেখে আসতে হবে। আর যদি একাধিকবার ভ্রমণের জন্য টিকিট সংগ্রহ করে থাকেন তাহলে সেটা সঙ্গে রাখতে পারবেন। তবে টিকিট ছাড়া কোনো ব্যক্তি মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন না। এমনকি প্ল্যাটফর্মেই প্রবেশ করতে পারবেন না।
কেউ যদি অতিরিক্ত পথ ভ্রমণ বা কোনোভাবে টিকিট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ করে ফেলেন অথবা প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে আসার সময় টিকিট কার্ড দেখাতে না পারেন তাহলেও তিনি প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে বের হতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তাকে বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে। আর সে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য আলাদা একটি কক্ষ রয়েছে, সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভাড়া চুকিয়েই তবে ছাড়া মিলবে।
দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মেট্রোরেলে গড়ে তোলা হয়েছে যাত্রী ব্যবস্থাপনার কাজ। প্রতিটি স্টেশনে একটি করে বড় ঘড়ি রাখা হয়েছে। যাতে যাত্রীরা সময় দেখতে পারেন। রয়েছে ডিজিটাল মনিটর। সে মনিটরে কোন ট্রেন কখন আসবে, ট্রেনের অবস্থান, সময়, গতিবিধি সম্পর্কে যাত্রীরা জানতে পারবেন। এছাড়াও একটু পর পর নানা তথ্য জানাতে অ্যানাউন্সমেন্টের ব্যবস্থা থাকবে।
এসব বিষয় নিয়ে নানা ধাপে পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে। কখনও যাত্রী নিয়ে, কখনও যাত্রী ছাড়া এমন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে অর্থাৎ ট্রেনে সমন্বিত পরীক্ষা করা হয়েছে। সবশেষ যাত্রী নিয়েও চলাচল করা হয়। সেখানে যাত্রীরা কিভাবে উঠবেন, কিভাবে নামবেন, সব কিছুরই ট্রায়াল শেষ করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএলএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম এ ছিদ্দিক জানিয়েছেন, যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেভাবে মেট্রো পরিচালনা করে আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। মেট্রোরেল সম্পর্কে জনসাধারণকে ধারণা দিতে উত্তরায় এক্সিবিশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর যানজট কমিয়ে যাতায়াত সহজ করতে ২০১২ সালে ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মেট্রোরেল প্রকল্প। যা ছয়ভাগে বাস্তবায়ন হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ দিকে মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ এর একাংশ যাত্রী পরিবহনের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।
মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:
মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ৫ টাকা
চট্টগ্রামেও চলবে মেট্রোরেল, হচ্ছে ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান
মেট্রোরেলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাবে বিআরটিসি’র বাস
মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন এ মাসেই, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
সারাবাংলা/জেআর/এমও
অগ্রযাত্রার নতুন সঙ্গী গণপরিবহন বিআরটিসি মেট্রোরেল মেট্রোরেলের টিকিট