বরিশালে ডাকাত আতঙ্ক, একযোগে মসজিদে বেজে উঠল হুঁশিয়ারি
৭ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:১৭
বরিশাল: রাত তখন একটা। বরিশাল নগরীর প্রায় সব মসজিদের বেজে ওঠে, ‘ডাকাত প্রবেশ করছে। সবাই হুঁশিয়ার। সবাই সতর্ক থাকেন’। একটি দুটো মসজিদ নয়, পুরো বরিশাল নগরীর প্রায় সব মসজিদে একের পর এক হুঁশিয়ারি বেজে ওঠায় নড়েচড়ে ওঠে নগরবাসী। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত একটার দিকে যখন সবাই বিশ্বকাপের খেলা দেখায় ব্যস্ত ছিল, সেসময়ে নগরীতে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর ভাটিখানা, নতুন বাজার, কাউনিয়া, মহাবাজ, কালুশাহ সড়ক, নথুল্লাবাদ, আলেকান্দা, লুৎফর রহমান সড়ক, কাশিপুর, বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা, দেহেরগতি, সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর, লাকুটিয়াসহ নগরীর সব এলাকার মসজিদ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এ সময় আতংকিত নগরবাসী ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে নির্ঘুম রাত কাটায়। শুধু বরিশাল নগরীই নয়, আশেপাশের দুই-একটি উপজেলায়ও এমন ঘটনা ঘটেছে।
তবে পুলিশ বলছে, ডাকাতির কোনো খবর বাহিনীর কাছে নেই। এ ধরনের গুজব রটানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত বাবুগঞ্জের ভুতেরদিয়া গ্রাম থেকে। মাত্র দুইদিন আগে এখানে এক বিয়ে বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। একই সময় শিকারপুর বন্দর ঘেরাও করে অর্ধ শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে স্বর্ণের দোকানসহ বিশ থেকে পঁচিশটি দোকান লুটে নেয় ডাকাতরা।
মঙ্গলবার রাতে ভুতেরদিয়া গ্রামে কেউ কেউ একদল লোককে জটলা করতে দেখে। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখেছেন তারা। মুহূর্তে গ্রামে ডাকাত পড়েছে রটে যায়। মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয় ডাকাত পড়েছে। এ সময় সেখান দিয়ে যেসব মালবাহী ট্রাক বরিশালে আসছিল তাদের মাধ্যমে চাউর হয় ডাকাত পড়েছে। মধ্যরাতে বরিশালের মসজিদগুলোর মাইক বাজতে থাকে। রাত দুটো পর্যন্ত নগরীর প্রায় সব মসজিদের মাইকে হুঁশিয়ার বাণী দেওয়া হয়। চরম আতংকে পড়ে মানুষ। পুলিশের কাছে ফোনের পর ফোন যেতে থাকে।
নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম জানান, মসজিদের মাইক থেকে রাত ২টার দিকে এলাকায় ডাকাত প্রবেশের খবর প্রচার করা হয়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের মসজিদের মাইক থেকেও একই ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে মাইকে হুঁশিয়ারি শুনে রাস্তায় নেমে পড়ে পুলিশ। টহল জোরদার করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়, এটি গুজব।বরিশাল মহানগরীর কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল জানান, ডাকাতির খবর তাদের কাছে নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, ‘আমরা শুনেছি কেউ কেউ মসজিদে মাইকিং করছেন। সর্বত্র পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিম বলেন, ‘সম্ভবত গুজব ছড়ানো হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। গুজব থেকে সকলে সতর্ক থাকুন।’
বিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মধ্যরাতে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে।’
সারাবাংলা/আরএফ/