‘বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুদের আমরা ভুলব না’
১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:৩৭
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
‘মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় ও রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভোলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ রোববার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ৩০ জন রাশিয়ান ও ভারতীয় যোদ্ধা নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
বনানীতে অবস্থিত নৌ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেন লেফটেনেন্ট জেনারেল জয় ভগবান সিং যাদব (অব.) এবং রাশিয়ান দলের নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন (অব.) স্ট্যানিসলাভ গরাবাচেভ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারত ও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও নৌ সদর দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারত ও রাশিয়ার তথা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে, মুক্তির সংগ্রামে স্বাধীনতা অর্জনে ভরত ও রাশিয়া বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো আমাদের সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের অপারেশন জ্যাকপটকে সাফল্যমণ্ডিত করতে ভারতের অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
নৌ কমান্ডারদের গেরিলা প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদির মাধ্যমে প্রশিক্ষিত ও অপ্রতিরোধ্য করে গড়ে তুলতে ভারতের প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের আগে ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে যে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল তার কথাও তিনি বক্তব্য তুলে ধরেন।
পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধ শেষের পরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নৌ চ্যানেলে মাইন অপসারণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে জাহাজ চলাচলে উপযোগী করা ও বিপদমুক্ত রাখতে রাশির যে ভূমিকা ছিল তাও নৌবাহিনীর প্রধান কৃতজ্ঞতাসহ স্মরণ করেন। তিনি বলেন রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সব সময়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং এ সম্পর্কের কারণে স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাশিয়া সফর করেছিলেন।
অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ আশা করেন বাংলাদেশ দুটি দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্ব জোরদার করতে একসঙ্গে কাজ করে যাবে। তিনি বাংলাদেশের এই দুই বন্ধু রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও রাশিয়ার এই দীর্ঘ বন্ধুত্ব নানান কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে আমাদের পাশে ছিলে। আমাদের রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে তোমাদের আত্মত্যাগও কম নয়। একসঙ্গে আমরা সেসব কঠিন সময় দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছি। আমরা আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তোমাদের সে অবদানকে সম্মান জানাই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে বিশ্বাসী। আমাদের বিশ্বাস আগামীতে এ বন্ধুত্ব আরও সুসংহত হবে।
অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিনের বক্তব্যের জবাবে ভারতীয় দলের প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল জয় ভগবান সিং যাদব (অব.) এ সফর আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া। এ সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও জোরদার করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যেন আমরা সামনে আসা সকল চ্যালেঞ্জকে একসাথে মোকাবিলা করতে পারি।
গত তিনদিন আমরা বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে পেয়েছি তাতে আমরা সত্যিই মুগ্ধ।
রাশিয়া দলের দলনেতা স্ট্যানিসলাভ গরাবাচেভ বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর প্রধানকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আমি সে সময়ের কথা এখনও স্মরণ করি। সেসব স্মৃতি ভোলা সম্ভব নয়। আমাদের এই বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী।
৬ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসা ৩০ সদস্যের দুই দেশের এই যোদ্ধার দল, ১৯ ডিসেম্বর নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন।
সারাবাংলা/জেএ/এমএ
নৌবাহিনী বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ রাশিয়া সশস্ত্র বাহিনী