চট্টগ্রামে এবারের বিজয় দিবসও অস্থায়ী শহিদ মিনারে
১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:০৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৯ মাস সময় নিয়ে একবছর পার হতে চললেও চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি গণপূর্ত অধিদফতর। এর ফলে এবারের বিজয় দিবসও পালন করতে হবে অস্থায়ী শহিদ মিনারে, যদিও সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকরা এবারের ১৬ ডিসেম্বরের আগেই নতুন শহিদ মিনার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই শহিদ মিনারের পুরো কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এবার বিজয় দিবসের আগে না হলেও ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম শহরের কে সি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে নতুন অবয়ব লাভ করা এই শহিদ মিনারেই শহিদ দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হতো। ২০২১ সালে সালে স্বাধীনতা দিবস ছিল ভাঙার আগে সেই শহিদ মিনারে সর্বশেষ কর্মসূচি। এরপর ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণের কাজ।
চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের দাবির মুখে জরাজীর্ণ সরকারি গণগ্রন্থাগার ও চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট ভেঙে সেখানে একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরির পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আটতলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, যার সঙ্গে পুরনো শহিদ মিনার ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত।
২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে এখনও চলমান আছে। দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানোর পর ২০২৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও শহিদ মিনারের স্তম্ভ তৈরির কাঠামোই বসানো হয়নি এখনও। নিচের ভিত্তি নির্মাণের পর বেদির ঢালাই কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে শহিদ স্তম্ভ, মুক্তমঞ্চ এবং মুসলিম হল থেকে শহিদ মিনারে যাবার জন্য রাস্তার ওপর ২১ ফুট প্লাজা নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত বছরের নভেম্বরে শহিদ মিনারের কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে পারিনি। শহিদ মিনারের সামনে যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটা আছে সেটাও বন্ধ করতে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এ জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করেও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারিনি। তবে প্রকল্পের মধ্যে শহিদ মিনার অংশের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ।’
২১ ফেব্রুয়ারির আগেই কাজ শেষ করে শহিদ দিবসে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহিদ মিনার খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আছে বলে প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানিয়েছেন।
অবশ্য পুরনো শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার আগে জাতীয় দিবসগুলো পালনের জন্য নগরীর নিউমার্কেটের পাশে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের মাঠে একটি অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে গণপূর্ত অধিদফতর। গত বছরের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম নগরবাসীকে এবারও সেখানেই বিজয় দিবস পালন করতে হচ্ছে।
জাতীয় দিবসের জন্য শহিদ মিনারকে প্রস্তুত করার কাজ করে সিটি করপোরেশন। এবারও অস্থায়ী শহিদ মিনারে বিজয় দিবস পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি এবং আমাদের কাছে আর কোনো অপশন নেই, অস্থায়ী শহিদ মিনারেই বিজয় দিবস পালন হবে।’
নির্ধারিত সময়ে শহিদ মিনারের নিমাণ সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার আমাদের আবেগের উৎস। চট্টগ্রামে আলাদা কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। এজন্য ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ আমাদের এই শহিদ মিনারেই পালন করতে হয়। যখন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ভাঙার সিদ্ধান্ত আসে, তখন সংস্কৃতিকর্মীরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৯ মাস অর্থাৎ এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা অস্থায়ী শহিদ মিনারে জাতীয় দিবসের কর্মসূচি সরিয়ে নিলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক।’
কেন্দ্রীয় আদলে হচ্ছে না চট্টগ্রামের শহিদ মিনার
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের কাঠামো অনুসরণ করে দেশ-বিদেশে একই ধরনের শহিদ মিনার নির্মাণ প্রশ্নে চলতি বছরের জুনে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের ধারণা ছিল, নতুন শহিদ মিনারটি কেন্দ্রের আদলেই হবে। তবে নতুন শহিদ মিনার ভেঙে ফেলা কাঠামোর আদলেই হচ্ছে।
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো শহিদ মিনারটা পুনঃনির্মাণ করছি। আগের নকশা পরিবর্তনের তো সুযোগ নেই। কারণ এই প্রকল্প যখন নেয়া হয়েছে, সেটা যেভাবে অনুমোদন হয়েছে সেভাবেই তো আমাদের কাজ করতে হবে। আগে ৪টি স্তম্ভ ছিল, এখনও থাকবে। শুধু বেদির উচ্চতা ১১ ফুট বাড়ানো হয়েছে। আগে নিচে থেকে শহিদ মিনার দেখা যেত, এখন দেখতে হলে ওপরে উঠতে হবে। এর বাইরে কোনো পরিবর্তন নেই।’
সারাবাংলা/আইসি/ইআ