‘দেশের অগ্রযাত্রা যারা বাধাগ্রস্ত করেছিল, তারাই আস্তাকুঁড়ে’
১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:০২
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে বেশিদিন ধামাচাপা দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেটিই প্রমাণ হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। সেটি যারা বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল তারাই আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। আর বাংলাদেশের জনগণেই এই দেশকে আজ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে। আজকের দিনে সেটিই আমাদের প্রত্যয়।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবারের মতো এবারও শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নানা কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা আমাদের সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাদের যারা হত্যা করেছে, ওয়াদা ছিল তাদের বিচার করার। আমরা বিচার করেছি। জিয়াউর রহমান তাদেরকে ছেড়ে দেয়। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীদের হত্যাকারী সাত খুনের আসামিকেও জিয়াউর রহমান ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। এভাবে সারা বাংলাদেশে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে যারা, তারা সবাই তাদের কাছে হিরো। এই হলো বিএনপি আর জামায়াতের চরিত্র। এরা দেশকে কি দেবে? লুটে খেতে জানে, মানুষ খুন করতে জানে, দুর্নীতি করতে জানে, এটাই তারা জানে।’
কাজেই বুদ্ধিজীবীদের জন্য তাদের তো কোনো সম্মান নেই। অবশ্য সম্মানটা থাকবেই বা কি করে? এরা কেউ এইট পাস, কেউ মেট্রিক ফেল, কেউ ইন্টারমেডিয়েট ফেল; এদের তো কোন জ্ঞানী-গুণীদের প্রতি সম্মান থাকবে না; এটিই তো স্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগ জ্ঞানী-গুণীদের সম্মান জানায় দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তাদের পরিবার পরিজনের প্রতি সহানুভূতি জানাই। কারণ স্বজন হারানোর বেদনা কি আমরা বুঝি, আমরা জানি।’
আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাংলাদেশকে যে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল সেটা যে বাংলাদেশে পারে নাই, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। কারণ আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা বা আমাদের যারা বুদ্ধিজীবী; তারা এদেশের জন্যই জীবন দিয়ে গেছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ, যা আজকে বিশ্ব ঐতিহ্যেও স্থান পেয়েছে। সেই ভাষণকেও তারা নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পাারে না। আজকে সেই আড়াই হাজার বছরের সামরিক-অসামারিক যত নেতৃবৃন্দ যত ভাষণ দিয়েছেন, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাষণ সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে।’
জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে সেই জয় বাংলা স্লোগান তারা নিষিদ্ধ করেছিল। আজকে সেই জয় বাংলা স্লোগান উচ্চ আদালতের রায়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। গৃহহীন থাকবে না। জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, আল্লাহর রহমতে আর কিছু বাড়িঘর তৈরি হলে পরে এদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন- ঠিকানাবিহীন থাকবে না। এটি আমার ওয়াদা ছিল আমরা তা পূরণ করে যাচ্ছি।’
করোনা মহামারি আর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ আর স্যাংশন যদি না হতো বাংলাদেশ এতদিন আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। বিশ্ববাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এই অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছি। শক্তিশালী করে রেখেছি। সে জন্যই বারবার ঘোষণা দিয়েছি যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন। কখনো আমাদের যেন খাদ্যের জন্য কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আর দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যখন অভাব হয় তখন কিছু জিনিস দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়। কারণ কিছু জিনিস বাংলাদেশে হয় না বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষের কষ্ট লাঘব সম্ভব হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে এটি সম্ভব হয়েছে। ওরা থাকলে জীবনেও দিত না। সব জায়গা থেকে একটা চ্যাটা দিয়ে কি খাবে, সেই তালেই বসে থাকত।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
সভায় সূচনা বক্তৃতা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং হুমায়ুন কবির।
সারাবাংলা/এনআর/একে