‘মায়ের কান্না’য় বিব্রত হাস, মোমেনের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:২৭
ঢাকা: রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে। সেখানে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা অনির্ধারিতভাবে তার কাছে চলে যাওয়ার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে অসন্তোষ জানিয়েছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আজ হঠাৎ করে জরুরি ভিত্তিতে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে উনি বললেন, উনি একটি বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে অনেক লোক ছিল। উনি গিয়েছিলেন একটি বাসায়। কিন্তু বাইরে অনেক লোক ছিল। তারা রাষ্ট্রদূতকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল।’
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজন তাকে বলেছে, আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। কারণ তারা (বাইরে ও ভেতরে থাকা লোকজন) আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। নিরাপত্তার কারণে তিনি তাড়াতাড়ি চলে যান। এ ঘটনায় তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমি উনাকে বললাম, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার ওপর বা আপনার লোকদের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন, না। তবে উনার গাড়িতে হয়তো দাগ লেগেছে। কিন্তু উনি সিওর না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বললাম আপনার এবং আপনার লোকজনকে আমরা নিরাপত্তা দেব। আপনি আরও অধিকতর নিরাপত্তা চান আমরা দেব। তবে আপনি যে ওখানে গেছেন, এই খবরটা কে প্রকাশ করল; আমরা তো জানি না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কিছু জানে না। আপনারা আমাদের কিছুই জানানওনি। আপনি ওখানে যাবেন, এই তথ্যটা লিক করল কে? উনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমি তাকে আবার বলেছি, আপনার নিরাপত্তা দেব। কিন্তু আপনি বের করেন আপনার যাওয়ার খবরটা কে বের করল। উনি দুশ্চিন্তায় আছেন। আমি উনাকে বলেছি, আমাদের মিডিয়া খুবই সোচ্চার। তারা যেকোনো কিছুর পেছনে লেগে থাকে। তাদের আমি বাধা দিতে পারব না। কারণ আমাদের দেশে ফ্রিডম অব মিডিয়া খুবই স্ট্রং। আমি তাদের ডিস্টেঞ্জে রাখতে পারব। ১০ ফুট বা ১৫ ফুট।’
শাহীনবাগে যাওয়ার তথ্য কীভাবে প্রচার হলো- তা রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মোমেন। জবাবে পিটার হাস কোনো তথ্য দিতে পারেননি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ একবার আমাদের খবর দিল বাংলাদেশ থেকে ৭৬ জন নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা তালিকা দেওয়ার পরে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেল। ওই তালিকায় ভারতের দু’জন নাগরিকও আছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের মতো সংস্থা যাচাই না করে তথ্য দিচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ যারা এ কাজটি করেছে তাদের চাকরি চলে যাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সুমনের বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় ২৫ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রায় ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা ও সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে স্মারকলিপি দেয় ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের দূতের এই সফর বিষয়টি নিয়ে কথা না বললেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বলেন, ‘আমেরিকা খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।’ তবে ওবায়দুল কাদের সরাসরিই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব আজকে ভোরবেলায় বুদ্ধিজীবী দিবসে সাজ্জাদুল সুমনের বাড়িতে গেলেন। ২০১৩ সালে গুম হয়েছে। তার বাড়িতে উনি গেলেন, আমি সবিনয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে কতজন গুম হয়, সেই চিত্রটা কিন্তু সিএনএনে আমরা দেখেছি। কতজন ধর্ষিত হয় নারী, সেটাও আমরা দেখেছি। কতজন খুন হয় সেই চিত্রও আমরা দেখেছি।’
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম