ভূমি অধিগ্রহণে অর্থব্যয় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:০৬
ঢাকা: চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের অর্থব্যয় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নতুন পদক্ষেপ হিসাবে পরিচালন বা রাজস্ব বাজেটের আওতায় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি (কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক সরাঞ্জামাদি, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি) খাতে বরাদ্দ করা অর্থব্যয় সম্পৃর্ণভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
বিশেষ করে গত ২০২০ ও ২০২১ সালের দুই বছর করোনা মহামারির পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিও ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং রফতানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া দেশের অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থা। এই অবস্থায় দ্রুত কমছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। বর্তমানে তা কমে নেট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে ঘরে নেমেছে। এইসব চাপ মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতে খরচ কমাতে হচ্ছে সরকারবে। এসব ধারাবাহিকতায় বুধবার সরকারের বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমাতে একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হযেছে, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কয়েকটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ করা ব্যয় কমাতে কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ করা অর্থের ব্যয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ করা অর্থের বিপরীতে নতুনভাবে কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না। ইতোমধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এমন ক্ষেত্রে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। পরিচালন বা রাজস্ব বাজেটের আওতায় যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় সম্পূর্ণভাবে স্থগিত থাকবে। উল্লেখ্য, সরকারের বাজেটে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ে বরাদ্দ থাকে। উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এসব কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়নি।
এর আগে গত ৩ জুলাই তিনটি আলাদা পরিপত্র জারি করে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে আপ্যায়ন, ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী স্থগিত করা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পে আপাতত অর্থছাড় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ নভেম্বর জারি করা আরেকটি পরিপত্রে সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন করপোরেশন এবং রাষ্ট্রয়ও কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়নেও সকল প্রকার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বলা হয়, বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে দেওয়া বৃত্তি বা ফেলোশিপের আওতায় স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি কোর্সে পড়াশোনার জন্য অনুমোদন নিয়ে বিদেশ যাওয়া যাবে। তবে বিদেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বিশেষায়িত বা পেশাগত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বিদেশে যাওয়া যাবে।
সারাবাংলা/জিএস/ইআ