Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৪১

ঢাকা: ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ব্যাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার, এখন তা ৩ হাজার ৮০০ ডলার। যে গম টন প্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেত, তা এখন ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোনো কোনো দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যত দামই হোক, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং যোগান দিচ্ছি।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আপদকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাগবে ভতুর্কি দেয়াসহ তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটের বিষয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে। করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সবধরনের ভারি যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ ২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান টানা মেয়াদে থাকা সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে ৪/৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য কিনে কম দামে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। অযথা গুজবে কান দিবেন না। বাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।’

সরকারের টানা মেয়াদে গত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে পেরেছে। দেশ আজ খাদ্যশস্য-উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫.২%। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে যোগাযোগ অবকাঠামোখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে বলেন, ‘অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত জুন মাসে আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছি। এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে।’

অক্টোবরে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু উদ্বোধন করারও কথা তুলে ধরেন এবং গত নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়াসহ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলেও জানান।

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার আশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সেজন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করেছি।’

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে জন্য কাজ করে থাকে জানিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তার সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর