এ বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়…
১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৪:০৫
ফুটবলে অবশেষে শিল্পের জয়। যে জয়ে ছিল কেবল রুদ্ধশ্বাস। এই রুদ্ধশ্বাস কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম ছাপিয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মেসি ভক্তরা মাতে উত্তেজনায়। আর মাঠের উত্তেজনায় ছিল মেসির শৈল্পিক পাস, ড্রিবলিং, গোল অ্যাসিস্টের মতো রোমাঞ্চ ও জাদুকরী পায়ের শট। সেই শট প্রতিপক্ষের জাল ভেদ করে মাতিয়ে দেয় বিশ্বকে। লেখা হয় মেসি বিস্ময়। জাদুকরী ফুটবলের সৌন্দর্য তখন মেসির হাতে। ‘এ বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়’— কাতার বিশ্বকাপ যেন মেসি’ময়।
৩৫ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে চারটি বিশ্বকাপ খেলা হয়েছে মেসির। এর মধ্যে সাতবার জিতেছেন ব্যালন ডি অর। জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা আমেরিকা, লা লিগা, লিগ ওয়ান, ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপসহ অসংখ্য ট্রফি। এর আগেও বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছেন মেসি। কিন্তু গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বিশ্বকাপে ট্রফি অধরাই ছিল। এবার সেই অধরাই ধরা দিলো খুদে জাদুকরের কাছে। মেসির ক্যারিয়ারে আর কোনো অপূর্ণতা রইলো না।
বিশ্বকাপে মেসি শেষ ম্যাচটি হয়ত খেলেছেন রোববার। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। এই বিশ্বকাপ মেসিকে দিয়েছে দোহাত ভরে। শুরু থেকেই একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন গড়েছেন। মেসি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ২৬ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন বিশ্বকাপের ফাইনালে মাঠে নেমে। আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৩ গোলের রেকর্ডও হয়েছে তার।
বিশ্বকাপে দুইবার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জয়ের কৃতিত্বও গড়েছেন মেসি। এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে তিনি সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন।
৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টিনার। এমন এক ফাইনালে আর্জেন্টিনা জিতলো যেটিকে বোদ্ধারা বলছেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ফাইনাল। এই ম্যাচের শুরু থেকে ৮০ মিনিট পর্যন্ত অবশ্য একক আধিপত্য ছিল আর্জেন্টিনারই। প্রথমার্ধের আগেই দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে ৯০ মিনিটে বিশ্বকাপ জয়ের উদযাপন থেকে বিরত রাখেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন কিলিয়ান এমবাপে। মাত্র দুই মিনিটে দুই গোল করে খেলা ১২০ মিনিট পর্যন্ত টেনে নেন তিনি। অতিরিক্ত আধা ঘণ্টায় আরও বেশি রোমাঞ্চের অপেক্ষা।
১০৮তম মিনিটে দারুণ শটে আর্জেন্টিনাকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে নেন লিওনেল মেসি। যখনই মনে হচ্ছিল শিরোপা উঠলো মেসির হাতে, ঠিক তখনই বিপত্তি ঘটলো। ম্যাচের ১১৬তম মিনিটে কিলিয়ান এমবাপের শট ডি বক্সের ভেতর মন্টিয়েল হাত দিয়ে রুখে দেন। আর তাতেই ফ্রান্স পায় ম্যাচের দ্বিতীয় পেনাল্টি। স্পটকিক থেকে কিলিয়ান এমবাপে গোল করে ফ্রান্সকে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো সময় ফেরান তিনি।
১২০ মিনিট শেষে এলো এমি মার্টিনেজের পালা। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের নায়ক বিশ্বকাপ ফাইনালেও যেন একই স্ক্রিপ্টে অভিনয় করলেন। টাইব্রেকারে ফ্রান্সের এক খেলোয়াড়ের শট থামিয়ে আর্জেন্টিনাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি।
এর মাধ্যমে ২০ বছর পর আবার ল্যাতিনে ফিরল বিশ্বকাপ। আবার জয় হলো ল্যাতিন শৈল্পক ফুটবলের। সময়ের সেরা খেলোয়াড়ের হাতেই উঠলো বিশ্বকাপ। বুয়েন্স আইরেস থেকে দোহা— গোটা বিশ্ব মেতে উঠেছে মেসি বন্দনায়।
সারাবাংলা/পিটিএম/আইই