Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট: সব বন্দরে স্ক্রিনিং বাড়ানোর নির্দেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১৮

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দেখা যায় বছরের শুরুর দিকেও। সেই ওমিক্রনের উপ-ধরন বিএফ.৭ এর প্রভাবে আবারও কিছু দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ওমিক্রনের এই উপ-ধরন শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন ধরনকে ‘অত্যন্ত সংক্রামক’ উল্লেখ করে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সন্দেহজনক যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৫ ডিসেম্বর) অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নৌ, স্থল ও বিমানবন্দর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি চীন ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব দেশে ওমিক্রন বিএফ.৭ উপ-ধরনের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশি দেশসমূহে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

অধিদফতর বলছে, ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরন বিএফ.৭ অত্যন্ত সংক্রামক। এর সংক্রমণ রুখতে এবং দেশের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য দেশের নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল ও জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। এমতাবস্থায় এসব দেশ থেকে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, জেলার পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে স্থাপিত ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রা রেড হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটার কার্যকর রাখতে হবে। নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে। সেইসঙ্গে রিস্ক কমিউনিকেশন কার্যক্রম জোরদার করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয়— শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তুতির বিষয়ে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম।

তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসিসহ কোভিড হাসপাতাল যেগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গে মিটিং করছি। তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছি। আইসোলেশন ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক এবং প্রস্তুত আছে।’ এ সময় সবাইকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘নতুন করে বেশ কয়েকটি দেশে কোভিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশের সব বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিং বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব বন্দরে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বিএফ.৭, সেটি বিএ৫ এর একটি সাব ভ্যারিয়েন্ট। এটাকে বলা হয় আর১৮, অর্থাৎ একজন থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। তার মানে অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এটার সংক্রমণ ক্ষমতা চার গুণ বেশি। এটির আরেকটি ভয়ানক দিক হচ্ছে যে, ইনকিউবিশন পিরিয়ড অনেক কম। অর্থাৎ খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি আক্রান্ত হবেন এবং অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করতে পারবে। এটার উপসর্গ সম্পর্কে যা জানা গেছে, তা অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মতোই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনও এটার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যায়নি, তবে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তির মধ্যে অনেক ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। যাদের অন্যান্য রোগ আছে ও অন্তঃসত্ত্বা, তাদের মধ্যে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এর মধ্যে ভারতেও এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বিতীয় বুস্টার অর্থাৎ চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাব।’

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শ তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। সেখানে আছে চতুর্থ ডোজ নিয়ে নিতে হবে সম্মুখ সারির ব্যক্তিদের। এর জন্য প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। যারা কোমরবিডিটির মধ্যে আছেন, তাদের অবশ্যই সুরক্ষা সামগ্রী যেমন মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার, নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন পোর্টে ইতোমধ্যে সিডিসি থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সব জায়গায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করে আইসোলেশনে নিতে হবে। যেসব দেশে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি সেসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদের পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।’

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘কোভিড সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে সতর্কতা নেই বললেই চলে।’

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট করোনা বিএফ.৭ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর