Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজপথে পাহারাদার হিসেবে আবার শক্তি দেখাল আওয়ামী লীগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৫৬

ঢাকা: ১০ ডিসেম্বরের পর ৩০ ডিসেম্বরেও রাজপথে শক্তি দেখাল আওয়ামী লীগ। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্য অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরের নয়টি পয়েন্টে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের আয়োজনে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ার প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন।

বিএনপির ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে পাহারায় ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের মতো শুক্রবার রাজধানীজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি শুক্রবার বাদ জুম্মার পর পল্টনের কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে শুরু হয়। তাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এই গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ২৪ ডিসেম্বর একযোগে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গণমিছিল কর্মসূচি হাতে নেয় বিএনপি। সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি নির্ধারণ করে বিএনপি।

বিএনপিসহ তাদের সমমনা জোট শরিকদের ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে ছিল ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীরা। এসব পয়েন্টে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন। সকাল নয়টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান শুরু করে আওয়ামী লীগ। পরে বিকেলে সমাবেশ করে দলটি । বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শাহবাগে অবস্থান নেয়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামলী স্কয়ার চত্বর, রামপুরা বাড্ডা ইউলুপ, মিরপুর ১০নম্বর গোল চত্বর, উত্তরা, মহাখালী, ফার্মগেট, গাবতলিতে অবস্থান সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে ২০১৩ সালে বিএনপি জামায়াত বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনহানি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি যারা গত ১৪ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে, তারা আজকে গণমিছিলের ডাক দিয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এই ঢাকা মহানগরীর মানুষকে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তার পাহারায় থাকবে। যাতে তারা কোনো মতলব যেন হাসিল করতে না পারে। সেই কারণে আমরা পাহারাদারের ভূমিকা পালন করব।

যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তায় অবস্থান কর্মসূচিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, যাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই, তাদের (বিএনপি) মুখে আসলে এতো বড় বড় আওয়াজ, এতো বড় বড় বুলি মানায় না। বিএনপির আগে ছিল চার দলীয় জোট, পরে শুনলাম ২০ দলীয় জোট, তারপর শুনলাম জোট ভেঙ্গে দিয়ে ছোট ছোট জোট হবে, আজকে পত্রিকায় দেখলাম ৩০ দলীয় জোট করছে। বিএনপি শুধু ৩০ নয়, যদি ১৩০ দলীয় জোট করে তাহলেও আওয়ামী লীগের কিছুই করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের শিকড় এতো গভীরে আছে, এটি উপড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিয়য়ের সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাপ যেমন কিছুদিন পরে পরে চামড়া-খোলস বদলায়, বিএনপির জোটও কিছু দিন পরে পরে খোলস বদলায়। কোন সময় ২০ দল হয়, ১২ দল হয়, এখন বলছে ৩৩ দল। কিন্তু ৩৩ দলের মধ্যে ৩০টাকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে কারণ কয়েকটি হাতে গোনা দল ছাড়া বাকিগুলো আসলে সাইনবোর্ড-সর্বস্ব দল।

শ্যামলী স্কয়ার চত্বরের সমাবেশে সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, এই রাজপথ জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজপথ। যারা আমাদের অনুভূতি সাহসের প্রেরণা শেখ হাসিনার চলার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করতে চায়, যারা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের বাংলাদেশ বানাতে চায়। যারা বাংলাদেশকে খুনিদের বাংলাদেশ বানাতে চায়; সেই তারেক জিয়ার নির্দেশ বিএনপি রাস্তায় মিছিল করবে আর আওয়ামী লীগ ঘরে বসে থাকবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা পাড়া মহল্লায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওদের প্রতিহত করব, এটাই আমাদের শপথ।

শ্যামলী স্কয়ার প্রাঙ্গণের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সেখানে বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, এরা বলে রাষ্ট্র মেরামত করবে? এরা (বিএনপি) নষ্ট রাজনীতি করে। যারা নষ্ট রাজনীতি করে তারা রাষ্ট্র মেরামত করতে পারবে না। তারা ধ্বংস করতে পারে।

আজ সারা ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিছিলের নগরী ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সারা ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত আছে। ভোট চোরদের বিরুদ্ধে আমরা প্রস্তুত। হাওয়া ভবনদের বিরুদ্ধে আমরা প্রস্তুত।

পরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে যোগ দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফাইনাল খেলা হবে জানিয়ে দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা আক্রমণ করব না কিন্তু আক্রান্ত হলে ছেড়ে দেব না।

শ্যামলী স্কয়ারের সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি আবদুস সাত্তার মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহিসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সাবেক এমপি সানজিদা খানমসহ অনেকে।

মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর