মোবাইল ফোন ব্যবহারই কাল হলো রুশ সেনাদের
৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪২
দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের একটি মিসাইল হামলায় এ পর্যন্ত ৮৯ রুশ সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়া। গত শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ওই প্রদেশের মাকিভকা শহরের একটি ভবন লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। রুশ সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, মাকিভকাতে যে ভবনে ইউক্রেনের মিসাইল আঘাত হানে, সেটি একটি সেনা প্রভেশনাল কলেজ।
ওই ভবনটিকে কিভাবে ইউক্রেনীয়রা লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম হয়েছিল সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে রাশিয়া। বুধবার (৪ জানুয়ারি) ভোরে রুশ সামরিক বাহিনীর এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ভবনে থাকা সেনারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন। মোবাইল ফোন ট্র্যাকের মাধ্যমেই ভবনটিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
রাশিয়ার দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমার্স মাল্টিপল রকেট লঞ্চার দিয়ে ভবনটি লক্ষ্য করে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল ইউক্রেনীয় সেনারা। রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দু’টি মিসাইল ধ্বংস করতে পারলেও বাকি চারটি মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ভবনটিতে আঘাত হানে। স্থানীয় সময় ১ জানুয়ারি প্রথম ঘণ্টার প্রথম মিনিট , অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ০.০১ মিনিটে ভবনটিতে আঘাত হানে ইউক্রেনীয় মিসাইল। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের পর পাল্টা আঘাতে ইউক্রেনীয়দের মার্কিন সরবরাহকৃত হিমার্স মাল্টিপল রকেট লঞ্চারটি ধ্বংস করা হয়েছে।
মাকিভকাতে মিসাইল হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৪০০ রুশ সেনাকে হত্যা করা হয়েছে বলে রোববার দাবি করে ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়ার তরফ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৮৯। তবে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে দুই পক্ষের কোনো দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা বা গণমাধ্যম। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পর এই সংখ্যা রাশিয়ার স্বীকার করা সবচেয়ে বড় রুশ সেনা নিহতের সংখ্যা।
মাকিভকাতে ইউক্রেনের মিসাইল হামলার পর প্রথমে মস্কো নিহতের সংখ্যা ৬৩ বলে জানিয়েছিল। বুধবার ভোরের রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে নিহতের সংখ্যা ৮৯ বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ, আহতদের মধ্যে অনেকেই পরে মারা গেছেন।
জানা গেছে, মাকিভকাতে অবস্থিতি ওই ভোকেশনাল কলেজে বহু ভর্তিচ্ছু সেনা ছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আসা তিন লাখ পুরুষের মধ্যে অনেকেই সেখানে ছিলেন। ভবনটির কাছাকাছি গোলাবারুদও সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মিসাইল আঘাতের পর যা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, মাকিভকাতে নিহতদের মধ্যে রেজিমেন্টের ডেপুটি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল বাচুরিনও রয়েছেন। বুধবার ভোরে প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, একটি কমিশন মিসাইল হামলার ঘটনার তদন্ত করছে।
একই বিবৃতিতে ইউক্রেনীয় হামলার কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘এটি ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট যে, ইউক্রেনীয় রেঞ্জের মধ্যে রুশ সেনাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার এই হামলার মূল কারণ। অর্থাৎ, মোবাইল ট্র্যাক করে একসঙ্গে এতো অধিক রুশ সেনাদের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে ইউক্রেন।’ যুদ্ধক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ বলেও জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, তদন্তে দোষী সাব্যস্ত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যতে যাতে অনুরূপ ঘটনা না ঘটে সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাশিয়া/আইই
সারাবাংলা/আইই