আন্দোলনের মালিকানা বিএনপি নেতাদের হাতে নেই: আমীর খসরু
৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনের মালিকানা বিএনপি নেতাদের হাতে নেই। সুতরাং বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করে কোনো লাভ হবে না।
কেন্দ্রঘোষিত গণঅবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবন প্রাঙ্গণে সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগে কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার, তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে অনেকটা গ্রেফতারের মতোই, দেশে না থাকলে যা হয়, মহাসচিব জেলে, মির্জা আব্বাস জেলে, রিজভী জেলে, আরও অনেকে জেলে। তারপরও কি আমাদের কর্মসূচিতে লোক কমেছে? বরং আরও বেড়েছে।’
‘কারণ এই আন্দোলনকে জনগণ নিজেদের আন্দোলন করে নিয়েছে। এই আন্দোলনের মালিকানা কিন্তু আমাদের নেতাদের হাতে নেই। এই আন্দোলনের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণের হাতে চলে গেছে। সুতরাং নেতাদের গ্রেফতার করে কোনো লাভ হবে না। এই আন্দোলনের মালিকানা মানুষ নিয়ে নিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এরা আর কিছু করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর কিছু মাস্তান নিয়ে চেষ্টা করবে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে কোনো মাস্তান, কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা কারও দাঁড়ানোর সাহস নেই। তারা পরাজিত হবে, নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবে।’
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে কতো শক্ত বার্তা দেওয়া যায়, সেটার প্রমাণ আমরা পলোগ্রাউন্ডের জনসভার মাধ্যমে দিয়েছিলাম। সারাদেশে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে। কিন্তু আমরা কঠিন ধৈর্য্যের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদী, দখলদারের পরাজিত করেছি। তারা বিএনপিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে এই আন্দোলনকে পরাজিত করার একটি চক্রান্ত করেছিল। বিএনপি সেই চক্রান্তকে পরাজিত করেছে অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে আমরা তাদের পরাজিত করেছি।’
‘কোনো পেশিশক্তি দিয়ে নয়, অস্ত্র দিয়ে নয়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করেছি। ফ্যাসিস্টরা আপনাদের সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দিতে চাইবে, কারণ এটাই তাদের শক্তি। আমাদের সহিংসতার দরকার নেই, আমাদের সঙ্গে যেহেতু জনগণ আছে, এর চেয়ে বড় শক্তি আর কিছু নেই। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে, প্রশাসনের মধ্যে দলীয়ভাবে কাজ করছে, তাদের কেউ জনগণের শক্তির সামনে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা সেই শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’
১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে ‘হালকাভাবে’ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে অবস্থান কর্মসূচিকে হালকাভাবে দেখে, রাজনৈতিকভাবে হালকা প্রো্গ্রাম হিসেবে দেখে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হতে দেয়া যাবে না। কারণ এই অবস্থান কর্মসূচি, অন্য অবস্থান কর্মসূচির মতো নয়। এটা মানববন্ধনের কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে শেখ হাসিনার দখলদার, স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের কর্মসূচি। এই গণঅবস্থান কর্মসূচি চট্টগ্রামে এমনভাবে করতে হবে যাতে পলোগ্রাউন্ডের জনসভাকে অতিক্রম করে যায়।’
সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমার দল কর্মীনির্ভর দল। অপেক্ষা করছি, ওবায়দুল কাদের কখন লুঙ্গি ফেলে চলে যায়। আর দুয়েকটা মিটিংয়ের পর তাদের চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। তারা এলে চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টি হবে, সেজন্যই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবো।’
মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, ‘আমরা যে আন্দোলনে নেমেছি, এর মধ্যে অনেকে শাহাদাতবরণ করেছেন। রক্তের এই প্রতিশোধ আমরা নেব। ১১ জানুয়ারি আমাদের কর্মসূচি সফল করার মধ্যে দিয়ে একটা বার্তা দিতে চাই, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে এই সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। আন্দোলন আমরা অনেকদিন করে আসছি। এবার চূড়ান্ত আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, নগর কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, উপজাতি সম্পাদক ম্যা মা চিং, কক্সবাজার জেলার সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, কেন্দ্রীয় সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়া, মশিউর রহমান বিপ্লব, আবু তালেব, রাঙ্গামাটি জেলার সভাপতি দিপন তালুকদার, নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, ফেনীর সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন, বান্দরবানের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, খাগড়াছড়ির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, রাঙ্গামাটির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন।
সারাবাংলা/আরডি/আইই