সারাদেশে হাড় কাঁপাচ্ছে শীত, পৌষে কমেছে গড় তাপমাত্রা
৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৫
ঢাকা: দেশজুড়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রার পারদ নিম্নমুখী। যে কারণে বেলা গড়ালেও মিলছে না সূর্যের দেখা। সেই সঙ্গে বয়ে যাওয়া উত্তরের হিমেল হাওয়া ভোগান্তি বাড়িয়েছে খেঁটে খাওয়া মানুষদের। বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে দেশের চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত তিন দিনে দেশের গড় তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও পরপর তিন দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ও ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছুটা বেশি রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে এটা মৌসুমের স্বাভাবিক তাপমাত্রা। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় গত তিন দিনে তাপমাত্রার পারদ যেভাবে কমেছে এটা অন্যান্য বছরগুলোর তাপমাত্রার চেয়ে অন্তত ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। যে কারণে এই মুহূর্তে দেশের ১৭ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চললেও সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, এখন বাংলা পৌষ মাস এবং শীত কাল। এ সময়ে এমন তাপমাত্রা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে এবার ঢাকার তাপমাত্রা বেশ কমেছে। উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বর্তমানে যে তাপমাত্রা রয়েছে তা আরও কিছুটা কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, বড় কোনো এলাকা জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি বা তারও নিচে নেমে যায় তাহলে তাকে তীব্র শৈত্য প্রবাহ বলা হয়।
১৭ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৭ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সংস্থাটির মৌসুমী প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ফরিদপুর, মাদারিপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, চুয়াডাঙা, পঞ্চগড় ও যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল জেলাসহ রাজশাীহ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এরমধ্যে গতকাল শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে দেশের চুয়াডাঙায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও সন্ধ্যায় তা কমে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, সাগরে মৌসুমী বায়ু স্বাভাবিক থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হু হু করে ঢুকছে উত্তরের বাতাস। যে কারণে তাপমাত্রার পারদ কমছে, অনুভূত হচ্ছে শীতের তীব্রতা। এই সময়ে রোদের দেখা কম মিলবে, আকাশ থাকতে পারে মেঘলা। আবার কোথাও কোথাও শেষ রাত থেকে বেলা পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে বর্ধিত পাঁচ দিনের মাথায় আবারও দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে।
কমেছে গড় তাপমাত্রা
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর এ সময়ে দেশের গড় তাপমাত্রা যা ছিলো এবার তার থেকে অন্তত দুই থেকে তিন ডিগ্রি কমেছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসের দিক ও গতিবিধি পরিবর্তন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কম, সুর্যের অবস্থান, কিরণ, জলীয় বাস্প কমে যাওয়া ও শুষ্ক আবহাওয়া এইসকল কারনে গড় তাপমাত্রা কমতে পারে। এই অঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরেই তাপমাত্রায় তারতম্য দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন পৌষমাস এবং শীতকাল। এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রার পারদ কমতে থাকে।
পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেকটা দেরিতে শীত শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে শীত অনুভূত হলেও এবার জানুয়ারির শুরুতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। পূর্বাভাসে ডিসেম্বরে শৈত্যপ্রবাহের কথা বলা হলেও তা দেখা যায়নি।
আসছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস বলছে, চলতি জানুয়ারি মাসে আরও তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এরমধ্যে বর্তমানে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ যার তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। একটি বয়ে যেতে পারে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ যার তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে তাপমাত্রা। আর বয়ে যেতে পারে দু’টি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এসময় তাপমাত্রা নামতে পারে ৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি ও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ
শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। এসময় সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। চাপ বাড়ছে শিশু হাসপাতালে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই নিউমোনিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই রোগ নিয়ে অন্তত ১০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও গত কয়েকদিনে সর্দি- কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগী আসে তার বেশিরভাগই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন।
সারাবাংলা/জেআর/এমও