Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. খুরশীদ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৩

ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে ফের চুক্তিভিত্তিক (২ বছর) নিয়োগ পেয়েছেন ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. রফিকুল ইসলামের সই করা এক প্রজ্ঞাপন এ তথ্য জানানো হয়।

আরও ২ বছর স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি থাকছেন ডা. খুরশীদ!

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা-৪৯ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে ইতোপূর্বে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তীত দুই বছর মেয়াদে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।

জনস্বার্থে আদেশ আকারে জারি করা এ প্রজ্ঞাপনে আরও জানানো হয়, এ পুনঃচুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বের চুক্তিপত্রের শর্তাবলি অপরিবর্তি রেখে পুনরায় সরকারের সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হবে।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম অধিদফতরের মহাপরিচালক ছিলেন। তার মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। ২০২০ সালের ২৬ জুলাই অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। তার স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষ হয় একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর তার মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

৩০ ডিসেম্বর সারাবাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আরও ২ বছর স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি থাকছেন ডা. খুরশীদ! তবে বছরের শুরুতেই তিনি সরকার নির্দেশিত সময়ে মহাপরিচালক পদের দায়িত্বভার ছেড়ে দেন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পার-২ অধিশাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আলমগীর কবীরের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর৷

বিজ্ঞাপন

এর আগে, দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এরপর থেকে একের পর এক কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে নীরবেই কাজ করে গেছেন তিনি। কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসায় অক্সিজেন সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগে যে সফলতা দেখিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর, তার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম।

মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার চাকরির নিয়মিত মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে পরবর্তী সময়ে তা দুই বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত ৩১ ডিসেম্বর তার সেই মেয়াদ শেষ হয়। এবার তাকে তৃতীয় বারের মতো এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলো।

সূত্র জানায়, অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম যখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রথম ঢেউ চলছিল। জেকেজি হেলথকেয়ার দুর্নীতি, রিজেন্ট হাসপাতাল দুর্নীতি, পিপিই সংকটসহ নানা সমালোচনায় বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাল ধরেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ও আরেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. সানিয়া তাহমিনাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভালোভাবেই সামাল দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, প্রশাসন) ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাসহ (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পরবর্তী ঢেউ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি সফলভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমও সফলভাবে পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যার নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাস খানেক পরেই দেখা যায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে পুরো বিশ্বে বাড়তে থাকে কোভিড-১৯ সংক্রমিতের সংখ্যা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যখন মানুষ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার পরে অক্সিজেন সংকটে হাহাকার করছিল, তখন বাংলাদেশেও একই সমস্যার আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জোরালো পদক্ষেপে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় অক্সিজেনের অভাব তেমনটা দেখা যায়নি। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এ সময় দেশে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার ল্যাব সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায়ও এসেছে গতি। বর্তমানে সকল সরকারি হাসপাতালেই স্থাপিত হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন। এছাড়াও দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি ছিল সারাবিশ্বে প্রশংসনীয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে চলমান নানা উদ্যোগের কারণেও প্রশংসিত ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

আর তাই সব মিলিয়ে চলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আরও দুই বছরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (স্বাস্থ্য) দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৪ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। চাকরি জীবনে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে সার্জারি বিভাগে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

অধ্যাপক খুরশীদ আলম ১৯৮৪ সালের ২২ নভেম্বর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সময়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার হিসেবে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রেজিস্টার হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি মেডিকেল অফিসার হিসেবে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে তিনি সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বরিশালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

স্বাস্থ্য অধিদফতর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর