নুতন যুগে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢুকবে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ
১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে পশ্চিমে খননকাজের পর প্রশস্ততা এবং গভীরতা (ড্রাফট) বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বিদ্যমান ড্রাফটের চেয়ে বড়ো জাহাজ প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে যাবে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান কয়েকটি জেটিতে সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটার গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ পায়। এ ধরনের জাহাজে মাত্র ১৮০০ থেকে ২৪০০ কনটেইনার বহনের সুযোগ থাকে। বড় ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। লাইটারেজ জাহাজ গিয়ে পণ্য খালাস করে জেটিতে আনার পর আবার সেই পণ্য খালাস করতে হয়। রফতানি পণ্যও একই পদ্ধতিতে জাহাজীকরণ করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়লে প্রতিটিতে আরও ১০০০ থেকে ১১০০ কনটেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। এতে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে, কমবে কনটেইনারে করে আনা-নেয়া করা পণ্যের পরিবহন ব্যয়। এছাড়া ছোটখাট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে জাহাজগুলোকে আর বহির্নোঙরে অলস বসে থাকতে হবে না।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ’১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো গেলে এখনকার চেয়ে বেশি কার্গো পরিবহন করা যাবে। বন্দরের টার্ন এরাউন্ড টাইম কমে আসবে। কী পরিমাণ বেশি কনটেইনার পরিবহন করা যাবে সেটা কার্যক্রম শুরুর পর বলা যাবে। ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর পর আমরা বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির কাছে সার্কুলার পাঠাবো।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙরে প্রতি বছর চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ আসে। শেষ হওয়া বছরের হিসেব অনুযায়ী, এসব জাহাজে ৩২ লাখ কনটেইনার এবং ১১ কোটি মেট্রিকটন কার্গো পণ্য এসেছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৩৭ মিটার লম্বা এবং সাত মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দেওয়া হতো। সত্তরের দশকে চ্যানেল সংস্কারের পর ১৯৭৫ সালে এই বন্দরে মাত্র সাড়ে সাত মিটার গভীরতা ও ১৬০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
আরও খননকাজের পর ১৯৮০ সালে ৮ মিটার গভীর ও ১৭০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯০ সালে সাড়ে আট মিটার গভীর ও ১৮০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯৫ সালে ৯ মিটার গভীর ও ১৮৫ মিটার দীর্ঘ এবং ২০১৪ সালে সাড়ে নয় মিটার গভীর ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এরপর আট বছর পর ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু-মাটি অপসারণ করে গভীরতা বাড়ানো হয়। জেটিসহ এলাকায় পানির স্বাভাবিক গভীরতা এবং জোয়ারের উচ্চতা হিসেব করে এবার ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বড় ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর ওপর সমীক্ষার আগে বিষয়টি চূড়ান্ত করেনি।
সূত্রমতে, জাহাজ ভেড়ানোর বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর জন্য ‘এইচআর ওয়েলিংফোর্ড’ নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব।
তবে বন্দরের ১৮ জেটির সবগুলোতে একই ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে না। জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বন্দরের হাইড্রোগ্রাফি ও নৌ-বিভাগের কর্মকর্তারা।
বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সোমবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ বার্থিংয়ের উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, কর্ণফুলী রিভার স্টাডি কনসালটেন্ট প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে