Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করে শেষ হলো পার্বত্যমেলা

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪১

ঢাকা: মোবাইলে মেসেজ দেখে মা পরীবাণুকে নিয়ে গোপীবাগ থেকে পার্বত্য মেলায় এসেছেন মাবিয়া খানম ও রুবিয়া খানম। আশি বছরের পরীবানু দারুণ আনন্দে মেয়েদের সঙ্গে মেলায় ঘুরে ঘুরে দেখছেন ও পছন্দের কেনাকাটা সারছেন। মেলায় এসে পাহাড় থেকে আসা এত জিনিসপত্র দেখে তারা মুগ্ধ। কিনেছেন শাড়ি, চাদর, বাঁশের ডালা, আদা, হলুদসহ নানা কিছু। বিশেষ করে পাহাড়ের বিষমুক্ত কৃষিপণ্য কিনে তারা সন্তুষ্ট। দরদাম নিয়ে বললেন, এত দূর থেকে আনা বিষমুক্ত খাবার ও কৃষিপণ্য অনুযায়ী দাম যা আছে তা ঠিকই আছে। চাইলেও তাদের পক্ষে সবসময় পাহাড়ে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় পাহাড়ের মানুষ, জীবন ও সংস্কৃতির এই উদযাপন দেখতে তাই ছুটে এসেছেন তারা।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে পার্বত্য মেলার শেষদিন দুপুর হতে না হতেই জমে উঠতে দেখা গেল মেলা। দর্শনার্থীদের পদচারণা, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া ও শুভেচ্ছা বিনিময়ে জমজমাট মেলা। পাহাড়ের সংস্কৃতির এমন চমৎকার প্রদর্শনে যেমন খুশি আয়োজক ও আগত অতিথিরা তেমনি পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্য, তাঁত ও হস্তশিল্পের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি নিয়ে আশাবাদী অংশগ্রহণকারীরা।

বান্দরবান থেকে পার্বত্যমেলায় এসেছেন ফুশি নু মারমা। সঙ্গে এনেছেন লেবু, জাম্বুরা, জুমের আলু, জুমের কচু, জুমের হলুদ, জুমের চালকুমড়া, জুমের আদা, মরিচ, পেঁপে, বিন্নির চাল। নিজেই চাষ করেন সার ও বিষমুক্ত এ সব কৃষিপণ্য। প্রতিদিন যা আনছেন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেলায় আসা, পণ্যের দাম, ও পরিবহণ খরচ মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করে চারদিনে তার বিক্রি প্রায় আশি হাজার টাকা। অনেকেই তার কাছে মোবাইল নম্বর নিয়েছেন পরে পাহাড় থেকে পণ্য পাঠাবেন। প্রথমবারের মতো ঢাকায় পার্বত্যমেলায় অংশ নিয়ে দারুণ আনন্দিত ফুশি নু মারমা। জানালেন অনেকেই তার মোবাইল নাম্বার নিয়ে রাখছেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে অর্ডার দিলে কুরিয়ারের মাধ্যমে সবজি পাঠাবেন।

মেলায় খাবারের স্টল দিয়েছেন রাঙ্গামাটি থেকে আসা জুম্মবি ফুড নামের ক্যাফেটারিয়া। পাওয়া যাচ্ছে পাজন, কাপ্তাই লেকের চাপিলা ও তেলাপিয়া মাছ ফ্রাই, কলাপিটা, সান্নি পিঠা, রোজেল্লা টি, ভুট্টা সিদ্ধসহ নানা খাবার। মানুষ সবচেয়ে বেশি খুঁজছে পাঁজন ও পিঠা। চারদিনে বিক্রি সত্তর হাজারের মত। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি মার্কেটিং। জানা গেল অনেকেই তাদের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি গেলে যাওয়ার জন্য।

মেলায় সুন্দর পাহাড়ি পোশাক পরে ঘুরছিলেন বান্দরবান থেকে আসা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দুই কর্মী। মীনাক্ষী তঞ্চংগা পরেছিলেন ট্র্যাডিশনাল পিনন-হাদি আর নু চি মারমা পরেছিলেন থামি ও টপস। দুজনেরই পরনে ছিল ট্র্যাডিশনাল গয়না। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল প্রতিবছর পুরুষ কর্মীরা আসলেও এবারই প্রথমবারের মত নারী কর্মী এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তরফ থেকে। সেই হিসেবে তাদের এবারই প্রথম পার্বত্যমেলায় আসা। নিজেদের স্টলে তো থাকছেনই, সুযোগ পেলেই মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। জানালেন, মানুষের ব্যাপক আগ্রহ মেলা ঘিরে। সমতলের মানুষ খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে চাইছেন কোনটা কী, কীভাবে রান্না করে। মেলায় এসে তারা দুজনেই দারুণ আনন্দিত।

এর আগে ১২ জানুয়ারি সমতল আর পাহাড়ের ব্যবধান ঘোচাতে রাজধানীতে শুরু হয় চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা।পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক তথ্যাদি সমতলের মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের জন্য এ মেলার আয়োজন। এ মেলার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানায় আয়োজক সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মেলায় ১০৩ টি স্টল। প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অপার সৌন্দর্যের লীলাভুমী পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি আর বান্দরবানের ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক, গান, নাচ, খাবার, কৃষি বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণ। তারই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল মেলার শেষদিনের প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মেলা ঘুরে দেখা শেষ করে মন্ত্রী বলেন, সমতল ও পাহাড়ের মানুষের কৃষি, সংস্কৃতি, জীবনবোধ সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ। পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি অবশ্যই উঠে আসতে হবে। তাদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, প্রচলিত প্রথাগত জীবনযাপন, জীবন বৈশিষ্টগুলোকে ধরে রাখা না গেলে আমরা যে বিস্তৃত সৌন্দর্যমণ্ডিত বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করি তা আর থাকবে না। পার্বত্য অঞ্চলের এই বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করতে ও তুলে ধরতে যা যা করা দরকার তা করতে হবে।’

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ‘বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির এমন অনেক মানুষ আছে যারা এতটাই দুর্গম অঞ্চলে বাস করে যে জীবনেও নিজ জেলা বা শহর দেখেনি। আজ সেসব লোক ঢাকায় আসছেন। সেসব মানুষের সন্তানরা আজ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বর্তমান সরকার যোগাযোগ ও শিক্ষায় যেভাবে উন্নয়ন করেছে তার সুফল আজ আমরা ভোগ করছি।’

এরপর অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফাওয়ের পক্ষ থেকে মেলার সেরা স্টল ও সেরা কৃষিপণ্যের স্টলের পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারজয়ীদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিরা।

মেলায় সেরা স্টলের প্রথম পুরস্কার একটি এলইডি টিভি পায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড-এর স্টল, দ্বিতীয় পুরস্কার একটি এলইডি টিভি পায় বান্দরবন জেলা পরিষদ স্টল, এবং তৃতীয় পুরষ্কার একটি মাইক্রো ওয়েভ ওভেন পান চ্যাং পাং কোমর তাঁত।

পার্বত্যমেলায় সেরা কৃষি স্টলের পুরস্কার পায় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ, দ্বিতীয় পুরস্কার পায় রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ, তৃতীয় পুরস্কার পায় জুম্ম বাজার। তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রাইস মানি দেওয়া হয়।

মেলায় সেরা স্টলের তৃতীয় পুরষ্কারজয়ী রাঙ্গামাটির চ্যাং পাং কোমরতাঁতের একজন প্রতিনিধি বলেন, ‘মেলায় পনেরো সাল থেকেই আসছেন তারা। পুরষ্কার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। এটি তাদের সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/একে

টপ নিউজ পার্বত্যমেলা শিল্পকলা একাডেমি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সম্পর্কিত খবর