বসন্তের আবাহনে দেবী সরস্বতীর বন্দনা
২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৪
ঢাকা: বিদ্যা আর সুরের দেবী সরস্বতী। সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী রাজহাঁসের পিঠে চড়ে অনুসারীদের মধ্যে বিদ্যা, জ্ঞান আর সুর ছড়িয়ে দিতে পৃথিবীতে আসেন দেবী। শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী, সরস্বতী পূজার পরদিন থেকে শীত থাকে না, শুরু হয় বসন্ত। বাসন্তী পঞ্চমীর এই তিথিতে সরিষা ফুল, হলুদ, পাকা কুল বরই, পলাশ ফুল সব মিলিয়ে শুরু হয় উৎসবের এক ভিন্ন আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। অর্চনা করা হচ্ছে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, দেবীর পূজার পর তারা বছরের প্রথম কুল বরই খাবেন। প্রথা অনুযায়ী এই ফলটি তারা সরস্বতী পূজার আগে খান না। তাই পূজার ভোগে অন্যতম আকর্ষণ পাকা কুল। এ ছাড়া বসন্তের আগমণ ঘটবে পূজার পরে। বসন্তের অন্যতম আকর্ষণ তাই দেবীর অঞ্জলিতে দেখা মেলে পলাশ ফুলের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চাকরি করেন মেয়ে জামাই। সেই সূত্রে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে আসা আরতি বৈদ্য এসেছেন হলের মাঠে আয়োজিত পূজায়। সকাল থেকে অঞ্জলি দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন মাঠের চারদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আলাদা আলাদা মণ্ডপ।
রাজধানীতে স্বরস্বতী পূজার সবচেয়ে বড় আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। করোনা মহামারির মধ্যে দুই বছর ছোট পরিসরে আয়োজনের পর এ বছর আবারও স্বরূপে ফিরেছে জগন্নাথ হলের জমজমাট আয়োজন। সকাল সাড়ে ৯টায় ধুপ-দীপ জ্বেলে প্রতিমা স্থাপন করে পুষ্পাঞ্জলির মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
পূজা পরিচালনা করেন জগন্নাথ হলের পুরোহিত সাধন চক্রবর্তী। অঞ্জলি দিতে সকাল থেকেই ভিড় করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আশপাশের এলাকার মানুষ। সনাতন ধর্ম অনুসারীরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও আসেন পূজা উপলক্ষে উৎসবে অংশ নিতে।
হলের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২টি বিভাগ তৈরি করেছে আলাদা আলাদা মণ্ডপ। প্রতিটি বিভাগের মণ্ডপে দেখা মেলে নিজস্বতার প্রকাশ। দেবী মূর্তি, মণ্ডপসজ্জা এবং রঙের বৈচিত্র্যে নিজস্বতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে প্রত্যেকটা বিভাগ।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী আঁখি জয়ধর আর শিপু বৈদ্যর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ২০১২ সাল থেকেই বাসায় বা হলে পূজা দিয়ে দল ধরে জগন্নাথ হলের মাঠে চলে আসেন তারা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর আসতে পারেননি, তাই এ বছর সকাল সকাল চলে এসেছেন পূজা দেখতে ও অঞ্জলি দিতে। বছরের শুরুতেই মায়ের কাছে আরাধনা করেছেন, মা যেন বিদ্যা-বুদ্ধি আর জ্ঞানে ভরিয়ে রাখেন এবং খারাপ শক্তি থেকে দূরে রাখেন।
দুই বছর ধরে সরস্বতী পূজার আয়োজন হচ্ছে জাতীয় প্রেসক্লাবে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পূজার পর শুরু হয় অঞ্জলি দেওয়া। জ্ঞান ও বিদ্যার দেবীর আরাধনার এই আয়োজনে সকাল থেকেই ভিড় করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। উৎসবে সামিল হয়েছেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সাংবাদিকরাও। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি বিকেলে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য সুধীজনদের অংশগ্রহণে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে এমন আয়োজন সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে সাহায্য করছে দাবি করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সরস্বতী পূজা উদযাপন কমিটির আহ্ববায়ক সুভাষ চন্দ বাদল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যা, আলো, শব্দ আর সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীকে আহ্বান করে আমরা জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হতে চাই। সনাতন ধর্মের মানুষ এই পূজা করেন বিদ্যাকে আরাধনা করতে। আমাদের প্রত্যাশা সাংবাদিকসহ সারা দেশের মানুষ বিদ্যার আলোকে আলোকিত হয়ে দেশের মানুষের পাশে থাকবে।’
প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যদের সহায়তা ও উৎসাহে সফলভাবে এই আয়োজন করতে পেরেছেন বলে জানান তিনি। সকলের সহযোগিতা পেলে আগামীতেও এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আশা প্রকাশ করেন সুভাষ চন্দ বাদল।
প্রেস ক্লাবে পূজা পরিচালনা করেন তরুণ তপন চক্রবর্তী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় প্রেস ক্লাবের সনাতন ধর্মাবলম্বী সদস্যদের প্রচেষ্টায় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমতিতে দুই বছর ধরে এই বাণী অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়।’
‘মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে আমরা বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করি। হংসবাহনা সরস্বতী আসেন এবং থাকেন। সরস্বতীকে কখনও বিসর্জন দেওয়া হয় না। তিনি চিরকন্ঠস্য অর্থাৎ তিনি সব সময় কণ্ঠে বাস করেন। এটিই তার মাহাত্ম্য।’
সারাবাংলা/আরএফ/ইআ