উন্নয়নে বদলে গেছে রাজশাহী, ফের বার্তা নিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা
২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩০
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের টানা মেয়াদে উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি জনপ্রিয়তা ও সমর্থনে বদলে গেছে বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীর জনপদ। তাই টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনেই নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নের বার্তা দিতে নতুন বছরের শুরুর মাসেই (২৯ জানুয়ারি) ভোট চাইতে রাজশাহী আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত নির্বাচনের আগেও রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় নৌকায় ভোট চেয়েছিলেন তিনি। প্রায় পাঁচ বছর পর আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের উন্নয়নের বার্তা নিয়ে পদ্মা পাড়ে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পর নতুন বছরে প্রথম কোনো জনসভায় যোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। গত বছরের ২৪ নভেম্বর যশোরে জনসভায় জনগণের কাছে নৌকার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ভোট চান। পরে ৪ ও ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দলীয় জনসভায়ও ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছিলেন। তারও আগে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবার হরিয়ানের বিশাল জনসভায়ও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তবে এবার রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো দাবি-দাওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগরের উন্নয়নে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন এবং ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মোট ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে বর্ণিল রূপে সেজেছে পদ্মাপাড়ের শহর। জানা গেছে, ২৯ জানুয়ারি সকালে প্রধানমন্ত্রী সারদা পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে দুপুর আড়াইটায় রাজশাহী যাবেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন উপহার নিয়ে রাজশাহী যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীতে ফায়ার সার্ভিস মোড়ের মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এই সময়ে বদলে গেছে রাজশাহীও। এই বরেন্দ্রভূমি এলাকায় বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। এখন বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান। রাজশাহীও বদলে গেছে। সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই কথা বলবেন। কথা বলবেন স্মার্ট বাংলাদেশকে ফোকাস করে। কীভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণ করেছেন এবং সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের আলোকে ২০৪১ সালের রূপকল্প হিসাবে তার পরিকল্পনা রয়েছে স্মার্ট ও উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের পরিকল্পনা রাজশাহীর জনগণের সঙ্গে শেয়ার করবেন।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি। কিন্তু আমরা নির্বাচনে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা অবশ্যই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার জন্য রাজশাহীবাসীর সমর্থন চাইবেন। ১৪ বছরে রাজশাহীর উন্নয়নের কথা তুলে ধরে ফের জনগণের ম্যান্ডেট চাইবেন তিনি।’
এর আগে, গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে এবারের জনসভাও হবে ঐতিহাসিক। রাজশাহীর এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। এ জন্য শুধু নেতাকর্মীরাই নন, সারা দেশের মানুষই অপেক্ষা করছেন।’
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষের বাস। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমাদের পার্শ্ববর্তী থানা ও জেলা থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী যোগ দেবেন। এটি হবে রাজশাহী শহরের জন্য সবচেয়ে বড় সমাবেশ।’ শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিস মোড়ের মাদ্রাসা মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভাগজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে জেলা ও মহানগরে ১০টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহীবাসী এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন প্রধানমন্ত্রীর আগমনের। রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনসহ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উদ্যোগে জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাজশাহী জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ গোটা শহরজুড়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্রের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সাজানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত দেখা গেছে। ইতোমধ্যে সমাবেশস্থলে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজশাহীজুড়ে নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।
এক সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনায় পিছনে থাকা প্রাচীন শিক্ষা নগরী পদ্মাপাড়ের জনপদ এখন আধুনিক নগরের প্রতিচ্ছবি। শুধু উন্নয়ন পরিকল্পনায় নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী দলটির কেন্দ্রীয় নজর আর উন্নয়ন রাজনীতির বদৌলতে এখন বদলে গেছে এই জনপদের রাজনীতি। তবে ক্ষমতাসীন সরকারের মেয়াদেও ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে পরাজিত করে বিএনপির মোছাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৩ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে পরবর্তী সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন তৎকালীন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে ফের দায়িত্ব পেয়েছেন। যদিও খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হককে পরাজিত করেন। রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তিনি বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুকে পরাজিত করেন। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে আয়েন উদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তিনি বিএনপি নেতা শফিকুল হক মিলনকে পরাজিত করেন। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) প্রকৌশলী এনামুল হক নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তিনি বিএনপি নেতা আবু হেনাকে পরাজিত করেন। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মনসুর রহমান প্রথমবার নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তিনি বিএনপি নেতা অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডলকে পরাজিত করেন। রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নৌকা নিয়ে জয়লাভ করেন। তিনি হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা আবদুস সালাম সুরুজ পরাজিত করে জয়লাভ করেন।
৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপির ও এর নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। এ নির্বাচনে মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ভোট নেওয়া হয় ১৪৭টি আসনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৯৬টি, জাতীয় পার্টি ১২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি চারটি ও জাসদ দুটি আসন পায়। আর ১৪ আসনে জয়লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মোট ২৩৪টি আসন পায়। দলটি ১৪ জোটের শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন করে।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম