Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেড় বছর ধরে চিফ অব টেকনিক্যাল ছাড়াই চলছে বিমান

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:০৮

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অত্যাবশীয় পদ চিফ অব টেকনিক্যাল। এই পদটি রাখা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন। এমনকি সংস্থাটির দেওয়া আদেশ এএনও-এর প্যারা ১.২.২.২.-এ উল্লেখ করা আছে। তবে এই পদ নিয়ে বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত দেড় বছর ধরে কাউকে পদায়ন করেনি বিমান। ফলে দেড় ধরে শূন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি। সারাবাংলার অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এ ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও বাংলাদেশ বিমানে সম্প্রতি যোগ দেওয়া নতুন সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, এই পদটি সম্পর্কে তার জানা নেই। নতুন যোগদান করায় অনেক কিছু সম্পর্কে এখনও তিনি অবগত নন। তবে দ্রুতই সবকিছুর সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলার অনুসন্ধান বলছে, বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন সাজিদ ২০২১ সালের ২৪ মে চিফ অব ট্রেনিং পদে যোগদান করার আগে তিনি চিফ অব টেকনিক্যাল পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পদোন্নতি পাওয়ার পরও ওই পদের পাশাপাশি আগের চিফ অব টেকনিক্যাল পদটিও ধরে রেখেছিলেন। জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাপ্টেন সাজিদ সিভিল এভিয়েশনের বাধার মুখে চিফ অব টেকনিক্যাল পদটি ছাড়তে এক প্রকারে বাধ্য হন। এর পর থেকে বিমান এই পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিফ অব টেকনিক্যাল না থাকার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে অপারেশন ম্যানুয়াল পার্টগুলো নতুন করে ইস্যু করা হয়নি। শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু পরিবর্তন করেই ডকুমেন্টসগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বিমান।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিমানের অপারেশন ম্যানুয়ালগুলো যখন তৈরি করা হয় তখন বর্তমানের একটি উড়োজাহাজও এই বহরে ছিল না। কিন্তু এখন যে অপারেশনাল ম্যানুয়াল রয়েছে সেটা তৈরি করা হয় ২০০৪ সালে। তখন রাষ্ট্রীয় বিমান বহরে ছিল ডিসিটেন, এয়ারবাস ৩১০, এফ ২৮-এর মতো পুরনো উড়োজাহাজ। কিন্তু বর্তমানে বিমান বহরে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া বোয়িং ৭৭৭, বোয়িং ৭৮৭, বোয়িং ৭৩৭ এবং ড্যাশ ৮ এর মতো অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, অপারেশনাল ম্যানুয়ালে চারটি ভাগ রয়েছে। পার্ট এ’তে রয়েছে ওএমএ (অপারেশনাল ম্যানুয়াল পার্ট), যেটিতে রয়েছে- এয়ারলাইন্সের নিয়মনীতি, দায়িত্ব, এয়ারলাইন্স পরিচালনার পদ্ধতিসহ সাধারণ নির্দেশনাগুলো। পার্ট বি’তে রয়েছে- প্রতিটি উড়োজাহাজের নিজস্ব পরিচালনা নীতি। পার্ট সি’তে রয়েছে- যেসব রুটে বিমান ও বিমানবন্দর পরিচালনা করে তার নির্দেশনা। আর পার্ট ডি’তে রয়েছে- বৈমানিকসহ অন্যান্যদের ট্রেনিং সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। এমনকি এই কাজগুলো ছাড়াও বিমানের টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট অন্যান্য আরও আট/নয়টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনায় কাজ করে থাকে।

অনুসন্ধানে বলছে, একাধিকবার বাংলাদেশ বিমানে নানা অনিয়ম নিয়ে অডিট করলেও এই গুরুত্বপূর্ণ পদটি খালি থাকার বিষয় এড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন। প্রতিটি এয়ারলাইন্সের জন্য একজন করে পরিদর্শক নির্ধারণ করা রয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ বিমানের জন্য যাকে পরিদর্শক নির্ধারণ করা আছে সেই সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জামানও রয়েছেন নিশ্চুপ।

এদিকে, বিমানের একাধিক বৈমানিকদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, বিমানের নানা অনিয়ম নিয়ে সিভিল এভিয়েশন থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা বললে বা অভিযোগ জানালে তিনি চুপ থাকতে বলেন। কারণ হিসেবে জানা যায়, ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জামান আগে বাংলাদেশ বিমানে ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যার কারণে বিমান থেকে তিনি নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জামান প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে অবশ্য তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। আমরা কাজ করছি। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে এই পদে একজনকে পদায়ন করা হবে।’ এতদিন কেন কাউকে পদায়ন করা হয়নি? এমন প্রশ্ন ছুঁড়লে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

এদিকে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই পদ আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমি মাত্র কিছুদিন আগে বিমানে যোগ দিয়েছি। সবকিছু এখনও আমি অবগত হতে পারিনি। তবে অনেক কিছু সম্পর্কে জানছি। আমার কাজ হলো- বিমানের যত অনিয়ম রয়েছে সবগুলো দূর করা। বিমানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় হবে না। যারা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে বিমানকে সাজানো হচ্ছে।’ যদি বিমানে চিফ অব টেকনিক্যাল পদ থেকে থাকে, আর সেই পদ যদি দীর্ঘদিন শূন্য থাকে তাহলে এ বিষয়ে জবাবদিহিতা নেওয়া হবে বলে জানান বিমানের সিইও।

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

চিফ অব টেকনিক্যাল বাংলাদেশ বিমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর