দুয়ার খুলল অমর একুশে বইমেলার
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৮
ঢাকা: ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’-প্রতিপাদ্য নিয়ে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর এবারই প্রথম ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনই শুরু হলো বইমেলা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করেন।
এর আগে সোমবার আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট দেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকছে ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়াও আরও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রুপা চক্রবর্তী ও শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
শুরুতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুরের ধারার শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় সকলে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়। এরপর সুরের ধারার শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে…. আমি কি ভুলিতে পারি’ পরিবেশন করেন। ভাষা শহিদের শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের সারিতে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
২০২২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এবার পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্যে ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনীতে ইকতিয়ার চৌধুরী, ফোকলোরে আবদুল খালেক ও মুহম্মদ আবদুল জলিল।
এবারের বইমেলার আঙ্গিক ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে, অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে আরও তিনটি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।
শিশুচত্বরটি এবার মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ পাঁচটি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১:০০টা থেকে বেলা ১:০০টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। এছাড়া নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে আটটার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা সকাল ৮টায় শুরু হয়ে এবং রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
সারাবাংলা/এনআর/আইই