‘অনির্বাচিত সরকার এলে মহাভারত নয়, অশুদ্ধ হবে সংবিধান’
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশে কিছু জ্ঞানী-বিজ্ঞানী লোক আছেন। হঠাৎ শুনলাম তাদের কেউ কেউ বলছেন, দুই/চার বছরের জন্য যদি একটা অনির্বাচিত সরকার আসে তাহলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না? হ্যাঁ, মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, এটা ঠিক। কিন্তু অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- প্রতিপাদ্য নিয়ে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হলো আজ থেকে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রুপা চক্রবর্তী ও শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
উদ্বোধনের আগে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুরের ধারার শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়। এরপর সুরের ধারার শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ পরিবেশন করেন। ভাষা শহিদের শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সারিতে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ তো অনির্বাচিত সরকার ছিল। কার কী লাভ হয়েছিল? তখন ছিল এ-গাছের ও-গাছের বাকল নিয়ে দল গঠন করার চেষ্টা। এ-দল থেকে ও-দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা। আমরা রাজনীতিবিদরা তো সব খারাপ। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা-টামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো। আর কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়াল। তখন তারা কেউ কিংস পার্টি করে, কেউ এই পার্টি করে, সেই পার্টি করে- এই অবস্থা।’
প্রধানমন্ত্রী সংবিধান অশুদ্ধের কারণ জানাতে বলেন, ‘ওই দুই বছরের অভিজ্ঞতা কেউ একটু স্মরণ করেন। তখন ব্যবসা বাণিজ্য বলেন, সাহিত্য চর্চা বলেন বা অর্থনৈতিক অবস্থা বলেন- সব তো বিপর্যয়ে চলে গিয়েছিল। তখন একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। আর সেই নির্বাচনে তিনশ সিটের মধ্যে বিএনপি জোট পেয়েছিল ৩০টি সিট। আর অন্য সব সিট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি, তখন জনগণের জন্য কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা সরকারে। এই দীর্ঘ সময় সরকারে আছি বলেই তো এদেশের সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে, খেলাধুলার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাহিত্য চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের প্রাণের বইমেলা আজ আরও বিকশিত হচ্ছে। দিনের পর দিন বই বাড়ছে। মানুষের লেখা বাড়ছে। মানুষের মনে যদি শান্তি না থাকে, তাহলে তো সাহিত্য চর্চাও হয় না। কোনো কিছুই হয় না, একটা পরিবেশ তো লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই পরিবেশটা আমরা বজায় রাখতে পেরেছি এই দীর্ঘ সময় ধরে। অর্থনৈতিকভাবেও বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা তো আর গাছের কোনো পাকা ফল না যে চট করে ছিঁড়ে ফেললাম। আমাদের যথাযথভাবে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশে মার্শাল ‘ল জারি হয়েছিল। উচ্চ আদালত একটা রায় দিয়েছে। মার্শাল ’ল অবৈধ। এই মার্শাল ’ল দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারাও অবৈধ সরকার। জিয়া-এরশাদ-মোশতাক তাদের বেলায় এই রায় দেওয়া হয়েছে। তাদের গৃহীত সমস্ত কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে আগুনে পোড়া যে মানুষগুলো বেঁচে আছে তারা যে দুর্বিসহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে তাও স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো কোনো আন্দোলন হলো না? এইগুলো মোকাবিলা করে, কখনো হেফাজতি আন্দোলন, কখনো হলি আর্টিজানের ধাক্কা, কখনো সরকার গঠন করার সাথে সাথে বিডিআরের ঘটনা। একটার পর একটা ঘটনা এসেছে। এর সঙ্গে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর সবকিছু মোকাবিলা করেই কিন্তু অর্থনীতির গতিকে আমরা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। দেশে একটা স্থিতিশীলতা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মাটির মানুষ দিয়েই আমরা দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এটি সুফল বয়ে এনেছে। এর কিছু কুফলও আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা সব দেশে থাকবে। যেটাই দেখেন, যাই শোনেন, অন্ততপক্ষে বাস্তবচিত্রটা জেনে নিয়ে তারপরে একটা মতামত নেবেন, সেটাই আমি চাই।’
উল্লেখ্য, এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট দেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম