সাহিত্য চর্চায় স্মার্টপ্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৪৩
ঢাকা: ভাষা সাহিত্য চর্চায় স্মার্টপ্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের বইগুলোকে পড়ার জন্য অডিও ভার্সন করতে হবে। এখন কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশ এটা করে। অনেক লাাইব্রেরি করে। সেইভাবে আমাদের দেশেও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে চলা উচিত বলে মনে করি। আমরা যদি প্রতিটি সাহিত্যকর্মের অডিও ভার্সন করে ডিজিটাল সিস্টেম নিয়ে আসি তাহলে আরও বেশি পাঠক পাব।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- প্রতিপাদ্য নিয়ে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হলো আজ থেকে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করেন।
নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যত বেশি সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করতে পারব, তরুণ প্রজন্মকে যত বেশি আকর্ষণ করাতে পারব, ততই তারা মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দিকে যাবে না। তখন তারা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে, জ্ঞান বিকাশের সুযোগ পাবে।’
খেলাধুলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের কিন্তু আলাদা একটা মাধুর্য আছে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক, নদী-নালা, খাল-বিল, বন, পাখির ডাক সবকিছুর মধ্যেই আলাদা একটা সুর আছে, ছন্দ আছে। এগুলো সম্পর্কে বিদেশিরা আরও জানতে পারুক, সেটাই চাই। জাতির পিতা একবার আন্তর্জাতিক সাহিত্য মেলার আয়োজন করেছিলেন। আমি মনে করি, বাংলা একাডেমি কিছু উদ্যোগ নেবে। এই ধরনের বিশেষ সাহিত্য মেলা- যেটা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের বাংলা একাডেমিতেই হবে। সেই সাহিত্য মেলার আয়োজন করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই আমাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব এসে গেছে। বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত করতে হবে। কিন্তু সেটা করতে হলে সব থেকে বেশি দরকার অনুবাদ।’
অনুবাদ সাহিত্যে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা হয়তো বছরে একটা দুইটা বই অনুবাদ করি। কিন্তু এরকম না করে বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে বিভিন্ন ভাষায় সেগুলো অনুবাদ হতে থাকবে। সেই ব্যবস্থাটা আমাদেরই করতে হবে। তাহলে সারাবিশ্ব আমাদের কথা জানবে।’ বাংলা একাডেমি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনকার যুগে মানুষ খুব বেশি বই খুলে পড়তে চায় না। হাঁটতে, চলতে, ফিরতে বা কোথাও যেতে যেতে যাতে শুনতে পারে সেই সুযোগটাও করে দেওয়া উচিত। তবে আমি মনে করি, এইভাবে শুনে ওই তৃপ্তিটা পাওয়া যায় না। একটা বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়তে যে আরাম বা যে স্বস্তি লাগে সেই অনুভূতিটা পাওয়া যাবে না। তবে আমি মনে করি ডিজিটাল ভার্সনটাও একান্তভাবে দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ-কালকার যুগ হচ্ছে ডিজিটাল যুগ। ডিডজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছি। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ফাইবার অপটিক দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে যোগাযোগ করা যায়। এবার করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে কাজে লেগেছে ডিজিটাল সিস্টেম। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। কাজেই আমাদের ভাষা সাহিত্য চর্চায়ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি চাই, বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের ভাষা সাহিত্যের একটা পরিচয় ঘটুক। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি জেলায় জেলায় যেমন বইমেলা করছি, তেমনি বিদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোও সাহিত্য চর্চার উদ্যোগ নিতে পারে। এখন আর শুধু রাজনীতি না, মিশনগুলোকে বলেছি সাহিত্য চর্চার উদ্যোগ ও ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি করতে। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে একটা দেশের জীবনযাত্রা তাদের সংস্কৃতি, মন-মানসিকতা সবকিছু জানা যায়। সেই সুযোগটা যাতে আমরা নিতে পারি সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘ভাষার দাবিতে জাতির পিতার আন্দোলনসহ নানামুখী অধিকারের আন্দোলন থেকেই আমাদের স্বাধীনতা। ধাপে ধাপে একটা জাতিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এবং সেই চেতনায় আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করি। স্বাধীনতার সুফলটাকে যেমন মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তেমনি আমাদের ভাষা সাহিত্যের উৎকর্ষও ঘটাতে হবে।’
অতীতে বইমেলায় আসার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন থেকে বইমেলা শুরু, তখন থেকেই আসতাম। সকাল থেকে সারাদিন এখানে ঘুর-ঘুর করতাম। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পায়ে শিকল পরে যায়, নিয়মের মধ্যে আসতে হয়। আগের মতো সেই স্বাধীনতাটা পাচ্ছি না। সেজন্য সেটা আর উপভোগ করতে পারি না।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রুপা চক্রবর্তী ও শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম