প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবির সঙ্গে সঙ্গেই মিলল পূরণের প্রতিশ্রুতি
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৭
ঢাকা: রূপগঞ্জের চনপাড়ায় পুর্নবাসিত পরিবারগুলোর জমির অধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে উদ্বাস্তু হয়েছিল এসব পরিবার। দাবি জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি সরকারিভাবে পরিবারগুলোকে জমির অধিকার দিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদের স্থান করে দিয়েছিলেন। এই রূপগঞ্জের চনপাড়া পুর্নবাসন কেন্দ্র সেই ধরনেরই একটি জায়গা। সেখানে এই পরিবারগুলি এখনও আছে কিন্তু ভূমির মালিকানা তাদের নাই। আমি ইতোমধ্যেই ভূমির সমস্ত তথ্য চেয়েছি। সেই তথ্য সংগ্রহ করে ওখানে যারা বসবাস করে তাদের ভূমির মালিকানা যাতে দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা নেব।’
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেট্রোর পাতালরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এসব ঘটনা ঘটে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রূপগঞ্জে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভপতি ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকা প্রধান তোমোহিদি ইচিগুচি বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশের আগে সকাল ১১টার দিকে রূপগঞ্জে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় (এমআরটি-১) প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি রূপগঞ্জের চনপাড়ায় ৬০ হাজার পরিবার; এই ৬০ হাজার পরিবার এসেছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন সারাদেশে গণহত্যা চালায় অগ্নিসংযোগ করে তখন। তারা তিন কোটি মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। বহু মানুষ বহু পরিবার ছিন্নমূল হয়ে ঢাকায় এসেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভিন্ন জায়গায় তাদের স্থান করে দিয়েছিলেন। এই রূপগঞ্জের চনপাড়া ধরনেরই একটি জায়গা। সেখানে এই পরিবারগুলি এখনো আছে। কিন্তু ভূমির মালিকানা তাদের নাই। তাদেরকে ভূমির মালিকানা যাতে দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থাটা ইনশাআল্লাহ আমরা নেব।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) বলেন, ‘আপনি আমাদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অনেকবার এসেছেন। বারবার আসেন। প্রতিবারেরই উন্নয়নের বার্তা নিয়ে আসেন। এই উন্নয়নের বার্তা নিয়ে আসেন বলে রূপগঞ্জবাসী আপনাকে সবসময় মনে রেখেছে। আপনি বারবার এসে আমাদের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন।’
অতীতে রূপগঞ্জ এলাকায় আসার প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দেন স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন,‘ এখানে আমাদের কোনো কিছু দাবি বাকি নাই। কি চাইবো আপনার কাছে। যা চাই, তার আগে সবকিছু আপনি করে দেন এখানে। সুতরাং আমাদের চাওয়া-পাাওয়ার আর কিছু বাকি নাই। তবে একটি দাবি আপনার কাছে আছে।’
দাবির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় পাক আর্মিরা আমাদের সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পেলে হত্যা করত। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যাদের ঘরবাড়ি পুড়ে যায়, যারা পিতৃহারা-মাতৃহারা, এতিম হয়ে যায়; সেই সব মানুষেরা অন্নের খোঁজে, আশ্রয়ের খোঁজে ঢাকায় এসেছিল। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সেই আশ্রয়হীনদের খুঁজে খুঁজে বের করে একটি তালিকার মাধ্যমে সে সময় যেসব ফ্যামিলি ছিল তাদের একত্রিত করে আমাদের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় পুর্নবাসিত করেছিলেন।‘
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৪ সালের পর আর বেশিদিন বঙ্গবন্ধুকে বেশিদিন বাঁচতে দেওয়া হয়নি। পঁচাত্তর সালে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে, স্বৈরশাসক জিয়া ক্ষমতায় আসে। যখন তারা জানলো এরা তো মুক্তিযোদ্ধা ছিল, এদের বঙ্গবন্ধু পুর্নবাসিত করেছে। তাই তাদের কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় নাই। এমনকি ভোটের অধিকার পর্যন্ত তারা পায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে তারা ভোটাধিকার পাচ্ছে। এখন সরকার থেকে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি সুযোগ পায়নি। সেই দাবিটা আপনার কাছে করছি, আপনার আশ্রয়ণ প্রকল্প আছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের জমি নাই তাদের জমি দিয়েছেন। তাই বঙ্গবন্ধু যাদেরকে পুর্নবাসন করেছিলেন তাদেরকে এই চনপাড়া এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ন্যায় পুর্নবাসন করার জন্য আপনার কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
এটুআই’র সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে শিল্পী মমতাজের কণ্ঠে মেট্রোরেলের থিম সং পরিবেশনসহ পাতাল মেট্রোরেলের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন হয়। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন- শেখ হেলাল উদ্দিন, শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সেলিম ওসমান, নজরুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেন খোকা।
সারাবাংলা/এনআর/এমও
চনপাড়া প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী