Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘২০০ টাকার লোভে জামায়াতে যোগ দেয় গোলাম আযম’

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:১৬

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতা গোলাম আযমকে ‘ভাষা সৈনিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সহায়তায় বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারা এই অপচেষ্টা চালায়। মূলত গোলাম আযম ছিলেন ‍উর্দুপ্রেমী। পরিস্থিতির চাপে তিনি ভাষা আন্দোলনের একটি কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র। এ প্রসঙ্গে ভাষা সৈনিক আব্দুল গফুর সারাবাংলা ডটনেটকে বলেন, ‘গোলাম আযম ভাষা সৈনিক ছিলেন না। বরং ২০০ টাকা পাওয়ার লোভে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

তমুদ্দুন মজলিস কমিটির সক্রিয় সদস্য আব্দুল গফুর সারাবাংলা ডটনেটকে জানান, গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেননি। ভাষা আন্দোলন প্রশ্নে তিনি (গো. আযম) ছিলেন দোদুল্যমান। উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিলেন গোলাম আযম। টাকা-কড়ির দিকে গোলাম আযমের লোভ ছিল।

আব্দুল গফুর সারাবাংলা ডটনেটকে বলেন, ‘১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙা বা ভাষা আন্দোলনের জন্য প্রবীণ ও নবীন নেতাদের কোনো গোপন ও প্রকাশ্য সভাতেই গোলাম আজম অংশ নেননি। ভাষা আন্দোলনে সামনের কাতারের নেতা ছিলেন আবদুল মতিন, কাজী গোলাম মাহবুব, শেখ মুজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধু), আব্দুল গফুর, অলি আহাদ, গাজীউল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তমুদ্দুন মজলিস কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় সাক্ষাৎকার থেকে এ তথ্য জানা গেছে।’

অপরদিকে ভাষা আন্দোলনে গোলাম আজমের ভূমিকা সম্পর্কে শওকত ওসমান লিখেছিলেন, ‘বেশ্যাও এক সময় সতী থাকে, গোলাম আযম তাও ছিল না।’

ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস বইয়ে সেলিনা হোসেন লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকার একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পক্ষে থাকলেও, সবশেষে ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন, যে করেই হোক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতেই সলিমুল্লাহ হলে ফকির শাহাবুদ্দীনের সভাপতিত্বে একটি বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শাহাবুদ্দিন আহমদের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে এই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন আবদুল মোমিন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। এবং তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। কিন্তু পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয় ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়।

বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইনসভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবে। ছাত্ররা ওই উদ্দেশ্যে আইনসভার দিকে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণে জব্বার এবং রফিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া বরকত, সালামসহ আরও অনেকে সে সময় নিহত হন। এই মিছিলেও গোলাম আযম ছিলেন না। একুশের সংকলন ও গাজীউল হকের লেখায় এসব তথ্য উঠে আসে।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ দেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) পক্ষ থেকে তাকে একটি মানপত্র দিয়ে তাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। এ মানপত্রটি পাঠ করেন ডাকসুর তৎকালীণ সাধারণ সম্পাদক গোলাম আযম। আসলে এটি পাঠ করার কথা ছিল সহ-সভাপতি অরবিন্দ বোসের। একজন হিন্দু ছাত্রকে দিয়ে পাঠ করালে লিয়াকত আলীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারতো। সেই আশংকা থেকেই একজন মুসলমান ছাত্র হিসেবে গোলাম আযমকে দিয়ে সেটা পাঠ করানো হয়। ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের এইটুকু ছিল ভূমিকা।

গোলাম আযম নিজেও ভাষা আন্দোলনে তার যৎসামান্য ভূমিকা নিয়ে পরে আফসোস করেছিলেন। ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের শুক্কুর শহরে গোলাম আযম এক বক্তৃতায় বলেন, ‘উর্দু পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের সাধারণ ভাষা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের অংশ নিয়ে ভুল করেছিলেন।’ (১৯ জুন ১৯৭০; দৈনিক পাকিস্তান)’

গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনকে এক মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল এবং তিনি নিজে এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য দুঃখিত। গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে বলেন, ‘উর্দু হচ্ছে এমন একটা ভাষা যার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার উপযুক্ত প্রচার ও প্রসার সম্ভব। কারণ উর্দু পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের সাধারণ ভাষা এবং এতে তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পদ সংরক্ষিত রয়েছে।’ নিজের ভ্রান্ত ভূমিকা সম্পর্কে খেদোক্তি করতে গিয়ে গোলাম আযম আরও বলেন, বাংলা ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই সঠিক কাজ হয়নি।’ (দৈনিক আজাদ, ২০ জুন, ১৯৭০)

আমতলা থেকে ইউনেস্কোর আরও খবর: 

ভাষার মাস শুরু

ভাষা আন্দোলনে বামপন্থীরা ছিল মুখ্য ভূমিকায়

অতঃপর কবি এসে মেলার উদ্যান অংশে দাঁড়ালেন

একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতার নামে চসিকের লাইব্রেরি

কিভাবে তৈরি হয়েছিল একুশের সেই অমর গান?

সারাবাংলা/এএইচএইচ/রমু/পিটিএম

২১ শে ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক আব্দুল গফুর আমতলা ইউনেস্কো ভাষা সৈনিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর