বায়ু দূষণ রোধে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪৬
ঢাকা: ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দুই সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকার দুই সিটি করপোরশেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ নির্দেশ দেন আদালত।
রোববার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার বায়ু দূষণ রোধ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পর এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আমাতুল করীম আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বায়ু দূষণ রোধে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তার কোনোটা বাস্তবায়ন না করায় ঢাকার বাতাসের মান খুবই ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্ব সূচকে ঢাকার বাতাসের মান সবচেয়ে খারাপ। টানা কিছুদিন ধরেই সেটা খারাপ আসছে। তার মানে এখানে বায়ু দূষণের মাত্রা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হচ্ছে। আদালত নির্দেশনা বাস্তবায়নের দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদনও দিতে বলেছেন।’
এর আগে, হিউম্যান রাইট পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এক আবেদনের শুনানির পর গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ জানতে চান। পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।
সে আদেশ অনুযায়ী আজ পরিবেশ অধিদফতর আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বায়ু দূষণ রোধে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখাতে না পারায় পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যাই থাকুক ঢাকার বাতাসের অবস্থা ভালো না। আপনারা (বিবাদীরা) আমাদের মেরে ফেলছেন।’
উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি বায়ু দূষণ রোধের করণীয় নিয়ে সভা করেছে বললে পরিবেশ অধিদফতরের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের হোক আর নিম্ন পর্যায়ের হোক। এসব করে কিছু হবে না। এসব বন্ধ করেন। তারা দেশের মনিব হয়ে যায়নি। মনে রাখতে হবে তারা এদেশের সেবক। শুধু উচ্চ পর্যায়ের মিটিং করলে হবে না। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কমিটি করে লাভ কি? আমাদের দরকার পরিবেশের উন্নয়ন। দেশ বাঁচলে আপনারা বাঁচবেন। দেশকে রক্ষা করেন। সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করেন।’
শুনানির এক পর্যায়ে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা আমাদের মেরে ফেলছেন। আপনাদের (অধিদফতরের কর্মকর্তা ও বিবাদীদের) অনেকের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে থাকে। তাদের তো সমস্যা নাই। আপনারাও হয়তো এক সময় চলে যাবেন। আমাদের তো এখানে থাকতে হয়। আমাদের সমস্যা হয়।’
আদালত বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা দিয়ে বাস্তবায়ন করতে বলেছি। আপনাদের কি মিটিং আর চা খেতে বলা হয়েছে? ইটভাটার মালিকরা আপনাদের ম্যানেজ করে ফেলে। বলছেন ম্যাজিস্ট্রেট (ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালনার) নেই, লোকবল নেই। কেন থাকবে না? আপনাদের লোকবল সমস্যার কথা বলেন না কেন? আপনাদের কাজে সন্তোষ হওয়ার মতো কিছু নেই।’
এরপর আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম