Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের অর্ধেক কাজ শেষ, উদ্বোধন ৯ ফেব্রুয়ারি

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৪

ঢাকা: মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিন বার। মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে চার বছর মেয়াদের প্রকল্প ঠেঁকেছে আট বছরে। আর গত আট বছরে ‘আখাউড়া-লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটির ৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে ৩২ কিলোমিটার। তারপরেও মেয়াদ বাড়াতে চায় ঠিকাদার, চায় অর্থও। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথেই উদ্বোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দিনক্ষণ ঠিক থাকলে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এ প্রকল্পের ৩২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত মোট ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু একনেক অনুমোদনসহ নানা প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালে। কচ্ছপ গতিতে কাজ এগিয়ে চলা প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই সময়ের মধ্যেও শেষ করতে না পারায় ফের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরেও কাজ শেষ করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে বাঁধা আসে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের পক্ষ থেকে। এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক পিছিয়ে যায়। প্রকল্পটি শেষ করতে আরও সময়ের প্রয়োজন বলে জানান কর্মকর্তারা। যে কারণে এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব এসেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আখাউড়া-লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক এমডি সুবক্তগাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএসএফের বাঁধার কারণে কাজে ধীরগতি। তবে জটিলতা দূর করার চেষ্টা চলছে। আপাতত যে ৩২ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা গেছে। এই ৩২ কিলোমিটার আমরা দ্রুত উদ্বোধন করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন,  ‘প্রকল্প মেয়াদ হয়তো কিছুটা বাড়তে পারে কিন্তু এ প্রকল্পে আর নির্মাণ ব্যয় বাড়বে না।’

সূত্র অনুযায়ী, আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ ডুয়েলগেজ লাইনের কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাকস্ট্রাকচারসহ যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে, ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ঋন দিচ্ছে ৪ হাজার ১১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যংক-ইআইবি এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি ১ হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করছে।

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা এলাকায় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাঁধার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ডাবল লাইন, দুই স্টেশন ও একটি সেতু নির্মানের কাজ বন্ধ রয়েছে। শূন্যরেখায় ১৫০ গজের ভেতরে কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে বিএসএফের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়। সবশেষ গত আগস্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ভারত সফরেও বিষয়টি আলোচনা হয়।

প্রকল্প সূত্র জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার আখাউড়া রেলজংশন থেকে লাকসাম রেলজংশন পর্যন্ত ডাবল লাইনের কাজ চলছে। আখাউড়া থেকে শশীদল পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ, ৬টি রেলওয়েস্টেশন, সেতু, কালভার্ট তৈরির কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।

জানা যায়, রেললাইন নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার পর বিএসএফ থেকে বাঁধা আসে। যে কারণে কসবা, সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন ও একটি সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত বছর স্থানীয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপরই জটিলতা নিরসনে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পর ওইসকল স্টেশন ও সেতুর কাজ শুরু হয়। কিন্তু তিন দিনের মাথায় আবার বাঁধা আসায় সেই থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার রেলপথ আগে থেকেই ডাবল লাইন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১৩১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্প’ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। যা গত ৮ বছর ধরে চলছে।

অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্প গত ৮ বছরে মাত্র ৩২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ করতে পেরেছে। বাকি ৪০ কিলোমিটারের কাজ চলমান। এই পরিস্থিতিতেই আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পের ৭২ কিলোমিটার পথের ৩২ কিলোমিটার উদ্বোধন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে।

প্রকল্প পরিচালক এমডি সুবক্তগাইন সারাবাংলাকে বলেন,  ‘আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ওইদিন সকাল ১১টায় শশীদল অংশে থাকবেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সূজনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগিন আরও বলেন,  ‘প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প যতটুকু কাজ এগিয়েছে এর উদ্বোধনের জন্য সময় দিয়েছেন। আমরা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় উদ্বোধন করতে পারবো। এখন সে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাকি ৪০ কিলোমিটারের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/জেআর/ইআ

আখাউড়া রেল প্রকল্প আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্প

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর