নীরব ঘাতক শব্দ দূষণ নির্মূল করতে সমন্বিত উদ্যোগ আহ্বান
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:০৩
ঢাকা: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বলেছেন, শব্দ দূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। শব্দ দূষণ কারা করছে তা নির্ণয় করতে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি। এই নীরব ঘাতককে নির্মুল করতে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমরা যেভাবে কাজ করছি ঠিক একইভাবে শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে পরিবেশ অধিদফতরের ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’ এর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরিবেশ অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
স্বাগত বক্তব্যে স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘শব্দদূষণসহ পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বেশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী।
সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘শব্দ একটি আঘাতসৃষ্ট বাতাসের ঢেউ, এই ঢেউ অসহনীয় পর্যায়ে গেলে তা শব্দ দূষণে পরিণত হয়। এই ঢেউয়ের ভেতর একজন মানুষ কত সময় বা কতদিন ধরে অবস্থান করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ। এটির ওপর নির্ভর করে মানুষ কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ‘ডিটিসিএ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। শব্দ দূষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সমন্বয় করতে আমরা সহযোগিতা করব। সরকারের এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষকে শব্দমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র প্রদান করতে হবে যেন তারা শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। শব্দ দূষণ রোধে রাস্তার পাশে সাউন্ড বেরিয়ারের জন্য গাছ লাগানো যেতে পারে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘যানবাহনের সৃষ্ট শব্দদূষনের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ তাই নিজ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের নিজেদেরই হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে। শব্দ দূষণের উৎস চিহ্নিত করে প্রাধান্য ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআরটিসি, পুলিশ, রাজউক, সিটি কর্পোরেশনকে পৃথকভাবে দ্বায়িত ভাগ করে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-র যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘শব্দের মানমাত্রা বজায় রাখতে আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা সরিয়ে ফেলতে হবে অর্থাৎ ভূমির ব্যাবহার যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বিআরটিএ থেকে গাড়ি রেজিস্টেশন করার সময় মালিক ও ড্রাইভারদেরকে নিয়ে হর্নের ভয়াবহতা সম্পর্কে সেমিনার করার মাধ্যমে সচেতন করতে হবে।’
এ ছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগন, ডাক্তার, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, গাড়ি চালক, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
সারাবাংলা/আরএফ/একে