‘বাপ-মা নেই’ দেশের কোনো শহীদ মিনারেরই
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৭
ঢাকা: বছর জুড়েই অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ দেশের সব শহীদ মিনারই। শুধুমাত্র একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই শুরু হয় ধোয়া মোছার তোড়জোড়। বছরের অন্য সময়গুলোতে ভাষা শহীদদের সম্মানে নির্মিত মিনারগুলোর দিকে নজর থাকে না কারও। এর আগে শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাও পরিপালিত হয়নি। এ অবস্থায় শহীদ মিনারগুলোর মর্যাদা সবসময়ই অক্ষুন্ন রাখার তাগিদ দিয়েছেন সুধীজনেরা।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) ইমরুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কিনা সেটাও বলতে পারছি না। সম্ভববত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হবে। সেখানেই যোগাযোগ করুন। এরপর মোবাইল ফোনে কথা বলা হয় একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য-১) এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কোন কথাই বলবো না। আপনার ফোন যে রিসিভ করেছি এটিই অনেক বেশি। কথা হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতরিক্তি সচিব (উন্নয়ন) হামিদুর রহমান খানের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। পিডব্লিউডি’র সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণ ও পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব ‘ওইভাবে’ কারও নেই। তবে আমি মনে করি এজন্য নির্দিষ্ট লোকবল প্রয়োজন। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্ন কর্মী দরকার। এজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একটি প্রস্তাবনা পাঠাবো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে। কত জনবল প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনও বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ কমিটি বসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেবেন।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষার জন্য জীবন দিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে বিশ্বের বুকে মর্যাদা দিয়েছেন ছাত্র-তরুণরা। তাদের সম্মানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ দেশের সব জেলা, উপজেলা শহর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানে। অথচ সারাবছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে এই স্মৃতির মিনার। কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চলে মৌসুমি পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
বছরজুড়েই মিনারের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। মিনারের পাখির মল পড়ে সাদা হয়ে যায়। শহীদ মিনার সংলগ্ন ফুটপাথে গাড়ি, মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা হয়। শহীদ মিনার চত্বরে বাদামের খোসাসহ নানা ধরনের খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয়। পথচারীরা পথ সংক্ষেপের জন্য কেন্দ্রীয় মিনারের পাদদেশকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছেন। দিনে বা রাতে শহীদ মিনার ব্যবহার করছেন ভবঘুরেরা। পুরো এলাকা যেন মাদকসেবীদের স্বর্গরাজ্য। এসব অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা রোধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রসাশন বা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভবঘুরেদের অবস্থান, অসামাজিক কার্যকলাপ, মিটিং মিছিল ও পদচারণা চলছে। অথচ এ বিষয়ে সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এই ধারার বাস্তবায়ন সম্পর্কে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও। নির্দেশনা জানিয়ে শহীদ মিনারের একপাশে রয়েছে নোটিশ বোর্ড। তবে সেদিকে কারও নজর নেই।
জানা যায়, শহীদ মিনারের সামগ্রিক বিষয়গুলো দেখভালের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এই কর্মীদের সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের দেখা মেলে কালেভদ্রেই।
আমতলা থেকে ইউনেস্কোর আরও খবর:
ভাষার মাস শুরু
‘২০০ টাকার লোভে জামায়াতে যোগ দেয় গোলাম আযম’
ভাষা আন্দোলনে বামপন্থীরা ছিল মুখ্য ভূমিকায়
অতঃপর কবি এসে মেলার উদ্যান অংশে দাঁড়ালেন
একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতার নামে চসিকের লাইব্রেরি
কিভাবে তৈরি হয়েছিল একুশের সেই অমর গান?
বছরজুড়ে ১৫০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য
সারাবাংলা/জেজে/রমু