আন্তঃদেশীয় রেল নেটওয়ার্ক গড়তে কাজ করছি: প্রধানমন্ত্রী
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশে নিরাপদ গতির যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত এবং তেলের খরচ কমাতে আমাদের সরকারের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। রেলখাতে সব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার নব-দিগন্তের সূচনা হবে এবং রেল পরিষেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।’
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রেলওয়ের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকেল্পর নবনির্মিত ৬৯.২০ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় শহরে রেলযোগাযোগের আলাদা পরিবেশ তৈরি হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রুপপুর (পাবনা) শশীদল (কুমিল্লা) ও জয়দেবপুর (গাজীপুর) প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। সরকারের টানা মেয়াদে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও কার্যক্রম নেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি এবং পদ্মা সেতুতেও রেলসংযোগ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর রেললাইনের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যশোরের রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া খুলনা-মোংলা ব্রডগেজ রেললাইন, আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ, ঢাকা-টংগী ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টংগী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা বন্দর রেললাইন, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, খুলনা-দর্শনা ডুয়েলগেজ ডাবললাইন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র রেল-লিংক,আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন নতুনভাবে রেললাইন করে যাচ্ছি এবং যাতে করে সারাদেশে একটা রেল যোগাযোগ হয়। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেল লাইন সংস্কার ও নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। লুপ-লাইনসহ মোট ২৬.৫২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন ভবন, ৭টি কালভার্ট,১৩টি লেভেল ক্রসিং গেট এবং সিগন্যালিং-টেলিকম কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এর ফলে প্রকল্প এলাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে রেল যোগাযোগও স্থাপিত হলো।”
ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরকে ডাবল-লাইনে উন্নীত করার প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোপূর্বে এই করিডোরের ৩২১ কিলোমিটারে মধ্যে ২৪৯ কিলোমিটার ডাবল-লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৭২ কিলোমিটার ডাবল-লাইন নির্মাণের উদ্দেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেস্ট ব্যাংক এবং নিজস্ব অর্থায়নে ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। ইতোপূর্বে লাকসাম-কুমিল্লা ট্রেন চলাচল চালু করা হয়ে গেছে। এখন শশীদল হতে রাজাপুর এবং কসবা হতে মন্দবাগ পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যা আজ উদ্বোধন করা হল। অবশিষ্ট ৩৩ কিলোমিটার রুটে ডাবল লাইন এ বছরের জুনে ইনশাআল্লাহ সমাপ্ত হবে।”
আজকে লুপলাইন ও আপ-ডাউন লাইনসহ মোট ৩২ কিলোমিটার নবনির্মিত লাইন উদ্বোধনের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে ট্রেন চলাচল নিরাপদ ও দ্রুততর হবে এবং অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে ১৯৬৪ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হওয়ার সময় যে সমস্ত রেল লিংকগুলি বন্ধ ছিল একে একে সেগুলোও আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু মেট্রোরেল বা আকাশ না আমরা পাতালরেলও যাচ্ছি। এমআরটি-১ এর অধীনে পাতাল রেলের কাজের উদ্বোধনও আমরা করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় শহরে রেলযোগাযোগের আলাদা পরিবেশ তৈরি হবে। যেটা মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত এবং আমাদের তেলের খরচ অনেক কিছু বেচে যাবে। ঢাকা শহরের যানজটও বেচে যাবে। সেইভাবে আমাদের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
বক্ততা শেষে প্রধানমন্ত্রী বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে পতাকা নাড়িয়ে রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন হতে রূপপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে নবনির্মিত ব্রডগেজ রেলপথ, শশীদল রেলওয়ে স্টেশন হতে শশীদল-রাজাপুর এবং কসবা-মন্দবাগ সেকশনে নবনির্মিত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলপথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর।
সারাবাংলা/এনআর/এমও