ভিন্ন স্বাদের ভুবনে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৫
প্রথম গল্পটি জাপানি তানাকার অসাধারণ জীবনকথা। সে যুবক। তবে জীবনঘাটের পাঁচালী তাঁকে ক্ষ্যাপাটে করে তুলেছে। গল্পের সমাপ্তিতে ‘কঙ্গনা তানাকার হাতে হাত রেখে বলে, ‘চলো আমরা এবার ঘর বাঁধি।’ ক্ষত, বিক্ষত হয়ে অবসন্ন প্রায় কঙ্গনা ও তানাকা প্রত্যাবর্তন করে আরেক জীবনে। এখানেই তাদের বসবাস ও নতুন ঠিকানা। এই হলো ‘তালাকার বাংলা ভ্রমণ’ গল্পটি।
পরের গল্পে কথাকার চিরহরিৎ অসাধারণ ও চমৎকার বেদনা-বিধুর ভায়োলিনে সুর তুলেছেন। বহিমিয়ান ও বাউন্ডুলে। রণবীর নিঃসঙ্গ ও নিরাশ্রয়ী আাঁকিয়ে; হারানো ও টালমাটাল। ২০ বছর আগে মরে যাওয়া রণবীরের প্রেমিক জলি এবং আরেক ভালোবাসা পতুল। পুতুলটি ব্যাটারি লাগিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। জলির সত্যি মৃত্যু হলো ক্যান্সারে। তবে তার এই স্ত্রী গায়ত্রী পুতুল নয়, স্বর্গ থেকে নেমে আসা অনিন্দ্য সুন্দর। ফিরে, ফিরে বারবার ঘুরে দাঁড়াবার আকাক্সক্ষায় আসলে রণবীর পারবে কী? এই প্রশ্নে ‘সুরের বাঁধনে একলা রণবীর’।
পরের গল্প ‘এল কন্দর পাসা’। এল কন্দর পাসা হলো একটি মাস্টার মিউজিক পিস। রচিত ১৯১৩ সালে। পুরো গল্পটিতে আকাশে উড়–, উড়– স্বপ্ন ও প্রত্যাশার মেঘরাশিতে জড়াজাড়ি করে আছে। লেখক সঙ্গীতবিদের চিত্রিত প্রেম ও অপ্রেম গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যান, সুরের রং, ছবি ও লয় মিলিয়ে গল্পে প্রেমিক আরেক তুখোড় গিটারিস্ট বলে ওঠেন অমোঘ সত্য- সুন্দরী নারীরা প্রকৃত ভালোবাসা অনুভব করেন হারানোর পর আর এই সুন্দরীদের নিয়তি।’
‘ক্যাথরিনের শেষ বিকেলে’ শরীর-লুটেরা স্বামী জর্জকে একসময় পরিত্যাগ করে মুক্তির আলোয় ভাসতে চান। ক্যাথির এই অনিবার্য মুক্তি তাঁর পথে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সাহসী প্রত্যয়। প্রত্যয়টি জাগিয়ে দেয় ফেইরি। এই বালিকাই ক্যাথির চিরসঙ্গী। তবে বালিকা হয়েও মানুষবোধে প্রাজ্ঞ।
‘কেউ এ্যান্থনির খবর রাখে না’ গল্পটিতে নিঃসঙ্গ অথচ প্রাণময় কর্মমুখর সেকান্দার তার নিত্যসহচর প্রিয় সারমেয় শাবকটির সঙ্গেই বন্ধন গড়ে। তার জগতটাকে উপলব্ধি করে। বোঝাতে চায়, জগতে কেউ কারও অপরিহার্য নয়। তবুও একের জন্য অন্যকে বাঁচতে হয়। যন্ত্রণা ছাড়া জীবন নেই, এই যন্ত্রণাবিদ্ধের সান্ত¡না। যা মানুষকে বেঁচে থাকতে প্রাণিত করে।
‘পাঁচটি গল্প’ লেখক চিরহরিৎ পেশায় সঙ্গীজ্ঞ, পেশাদার গিটার ও পিয়ানোবাদক শিক্ষক। অনেকগুলো সঙ্গীত লিখেছেন, সুর দিয়েছেন, বাজিয়েছেন এবং অনেক গান গিয়েছেন । গানের ভুবনেই তার চিরস্থায়ী বাস। তবে গল্পে তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ প্রমাণিত।
তার এই বইটি বেরিয়েছে গেল অমর একুশে মেলায়। তবে প্রকাশ হয়েছে হাতে এসেছে প্রায় বছরটি পর। প্রথম পাঠেই লেখকের মুন্সিয়ানা বোধ হয়। জীবনকে তিনি যেভাবে দেখেছেন গল্পের চরিত্রগুলো সেভাইে নির্মাণ করেছেন। নির্মিতিগুলো রক্তাক্ত, কান্না ও দুঃখময়। ঘুরে দাঁড়াবার মতো আকাশ ও রোদ্রমুখী। ফলে একটানে পাঠযোগ্য যাপিত জীবনকথা। জীবনমুখী এই লেখক। চিরহরিৎ যখন স্কুলপড়–য়া, তখন থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। নিরবধি লিখেই চলেছেন। কবিতা, গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ ১৫।
চিরহরিৎ তার ‘পাঁচটি গল্প’ বইতে গল্পগুলোর মধ্যে যে চরিত্রগুলোকে সৃজন করেছেন-বহুমাত্রিক। চরিত্রের সঙ্গে পাঠকের মিল-মিশ হয়। এ কারণেই লেখক চিরহরিৎ নিজেই পাঠকের সঙ্গে একাকার হতে পারেন। এই লেখকের বড় অর্জন, মহার্ঘ্যপ্রাপ্তি।
গল্পের বইটি প্রকাশ করেছেন রাজিয়া রহমান, তার জাগৃতি প্রকাশনী থেকে। চমৎকার ও নান্দনিক প্রচ্ছদ এঁকেছেন শাহাদাত সাব্বির। ৬৯ পৃষ্ঠা, দাম ২৫০ টাকা।
সারাবাংলা/একে