Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গৃহকর্মীদের আয়ের চেয়ে ব্যয় দ্বিগুণ: গবেষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:২৭

ঢাকা: বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন মূলত কিশোরী ও নারীরা। দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা ও বিবাহ বিচ্ছেদজনিত কারণসহ বিভিন্ন কারণে গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন তারা। কিন্তু এই পেশায় তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় দ্বিগুণ। শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহশ্রমিকদের ওপর পরিচালিত বিলস’র গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিলস’র যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এতে দেখা গেছে, গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা হলেও তাদের গড় মাসিক ব্যয় ১০ হাজার ৮০১ টাকা। তারা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী বলেছেন যে তাদের বর্তমান মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়।

এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, শতভাগ গৃহকর্মীই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করেন। ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসার ঘর কিংবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫ শতাংশ অনাবাসিক বা খণ্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন। ৮৭ শতাংশ অনাবাসিক/খণ্ডকালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। ২৬ শতাংশ গৃহকর্মী কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা বিলম্বের কারণে মজুরি কর্তনের শিকার হন।

এছাড়াও ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মী পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের কোনো প্রশিক্ষণ পাননি। যদিও ৮৫ শতাংশ নিয়োগকর্তা মনে করেন যে জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ অধিকার বৃদ্ধিতে এবং গৃহকর্মীদের স্বীকৃতি দিতে অবদান রাখে। তবে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ সম্পর্কে ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মীর এবং ৬৬ শতাংশ নিয়োগকর্তাদের কোনো জ্ঞান নেই।

বিজ্ঞাপন

৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। কোভিড-১৯ সংকটের সাথে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন এবং ২ শতাংশ আয়ের উৎস হারিয়ে তাদের স্বামী/পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন।

মাত্র ৪ শতাংশ গৃহকর্মী কোনো না কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। ৯১ শতাংশ নারী গৃহকর্মী জেন্ডার সহিংসতার বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার উপায় হিসেবে কোনো হটলাইন/হেল্পলাইন নম্বর সম্পর্কে সচেতন নন।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকের শোভন কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে যদি গৃহশ্রমিকের মর্যাদার বিষয়টি যুক্ত করা যায় তাহলে তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হবে। তবে গৃহশ্রমিককে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার আওতায় আনতে তাদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুস্বাক্ষর করা জরুরি।

গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা চিত্রের ওপর কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম- গৃহশ্রমিক নিবন্ধন, থানায় গৃহশ্রমিকদের জন্য পৃথক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ তৈরি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গৃহশ্রমিকের অধিকার ও তা লঙ্ঘনের প্রতিকার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা এবং অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় পরিচালিত ‘সুনীতি’ (সিকিউরিং রাইটস অব উইমেন ডমেস্টিক ওয়ার্কাস ইন বাংলাদেশ) প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বিলস-সুনীতি প্রকল্পের পক্ষে গবেষণাটি পরিচালনা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডিনেট।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত সচিব (অব.) ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক এবিএম খোরশেদ আলম, শ্রম অধিদফতরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সুস্মিতা পাইক, আইএলও ওয়ার্ক ইন ফ্রিডম প্রোগ্রামের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর এনি দ্রং, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সুনীতি প্রকল্পের সমন্বয়কারী তারেক আজিজ, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ, নিয়োগকারী ও গৃহশ্রমিক প্রতিনিধিরা।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

গবেষণা বিলস

বিজ্ঞাপন

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর